PEN- PROLAY.
INK- ANANYA.
তোমাকে লিখছি
অনন্যা ,
চোখ দুটো আমার
আজকাল
মাঝে
মাঝেই
বেশ
ঝাপসা
হয়ে
আসে
।
অনেক
কিছুকেই
আবছা
দেখি
তখন
। নেমে আসে এ পৃথিবীর সকল ধূসরতা । চোখের
সামনের
জিনিসগুলো
অস্পস্ট
হয়ে
আসে । মনে হয় কোথায় যে হারিয়ে গেলো , সেই যে আমার নানা রং এর দিনগুলি । জানিনা , তবু
কোথা
থেকে
নানা
রঙ
এসে
ভাসতে
থাকে
সামনে
।
কোথা
থেকে
আসে
আজকাল
এতো
রঙ
? কেনই
বা
দেখতে
পাই
- শুধু
কি
আমিই
দেখি ? কে
জানে
! মাঝে
মাঝে
মনে
হয়
, এইসব
রঙ
হয়তো
আমারই
ছিলো , না হলে তারা আমার কাছে কেন আসে ? সেই অনেকটা , " আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে , দেখতে আমি পাইনি " র মতো ।
হয়তো সময়ের চাপে , বাস্তবের তাপে - জমে ছিলো মাথার ভিতর কোন এক অবচেতন স্তরে ।
চেতনায়
যখন
ক্লান্তি
আসে
- চোখ
যখন
শ্রান্তি আসে
- তখন
একে
একে
আসে
এইসব
রঙ
।
অনেক
রঙ
।
ফিরে
আসে
" সেই
যে
আমার
নানা
রঙের
দিনগুলি
" ।
চোখের সামনে রঙ এর " তরঙ্গ মিলায়ে যায় , তরঙ্গ উঠে , কুসুম ঝরিয়া পড়ে , কুসুম ফুটে " - এই ওঠাপড়ার ভিতর আমার সামনে এক স্বত্বা ভেসে ওঠে – অবশ্যই সে নাটোরের বনলতা সেন নয় - সে আমার সেই তুমি - অনন্যা । জানি , জানি তুমি এসেছো এপথে মনেরও ভুলে । তবু তো এলে । আসতেই হতো । কারন , তুমি তো জানতে আমায় , " হয়তো কিছুই নাহি পাবো , তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাবো " ।
মাঝে মাঝে মনে হয় , চোখের এই অস্পস্টতা - সে আজকের তুমি আর আমি । শুধু মনেই হয় । কিন্তু বুঝিনা । আমি আজকের আমাদের কাছে জানতে চাই , " যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই - কেন মনে রাখো তারে ? " অতীতের কতো সব রঙ আসতেই থাকে - আসতেই থাকে । ধাক্কায় ধাক্কায় গিয়ে হয়তো ঠেকেছিলো মাথার ভিতর - একদম অবচেতন স্তরে । কিন্তু স্মৃতির বাঁধন একেবারে ছিড়ে যেতে পারেনি - তাই বর্তমানের চাপ কমলেই ওরা এভাবে সামনে চলে আসে , যেন ওরা অকারনে চঞ্চল ।
সমবয়সী অনেকেই শুনি ঝাপসা দেখে , আমারই মতো - কিন্তু চোখ বুঝলে তারা আমার মতো নানা রঙের মেলা দেখেনা । সাধারন কারন । হতভাগ্য গুলো বেহিসেবীর মতো জীবনের সব রং গুলো ব্যাবহার করেছে - বর্তমান যখনই যেখানেই বিবর্ণ হয়েছে , চেষ্টা করেছে তাকে যে করেই হোক রঙ্গীন করার । জীবনকে রঙিন করতে গিয়ে হয়তো জীবনকেই ভুল বুঝেছে । বোঝার চেষ্টাই হয়তো করেনি ।
জীবন ?
" তুমি তো সেই যাবেই চলে , কিছুতো না রবে বাকী " । জীবনের কামনায় ভুলেছে জীবনের সাধনা । ওরা মন খুলে কারো কাছে বলতে পারেনি , " জীবন যখন শুকায়ে যায় , করুনা ধারায় এসো " । ফলে আজ তাদের শুন্য ভান্ডার ।
কিন্তু আমি শুন্য নই । আমার বর্তমানকে যতোটা সম্ভব আটকে রেখেছিলাম । তাই চোখের বাইরে যতো ঝাপসা হয় , পাল্লা দিয়ে ভিতরের রঙ ততোই উজ্জ্বল হয় ।
মনে পরে , একদিন -তোমার সাথে অনেক দেয়া নেওয়া ছিলো - কথা ছিলো কতো ! আমাদের প্রতি কথার আলাদা আলাদা রঙ থাকতো । আজ যখন এসেছো আবার , কি নামে ডাকবো সেই সময়কে ? থাক । কিছুই বলার দরকার নেই । বরং ভাবি , " সামনে যখন যাবি ওরে , থাক না পিছন পিছে পড়ে " ।
তোমার প্রিয় রং ছিলো আকাশনীল - শুনে আমি বলেছিলাম , " আমি সেই আকাশে ডানা মেলে উড়তে চাই দীগন্তের দিকে - প্রতিদিন - প্রতিবার । “ তুমি উত্তরে বলেছিলে , " আমার মনের অনেক অনেক গভীরে একটা নাকি নদী আছে - একেবারে নীল - এমনিতে দেখা যায়না - কি যেন কি নাম তার - তুমি দেখেছিলে - এসেছিলে বৃষ্টির পায়ে পায়ে - তুমি সেই নদীতে ডুবে থাকতে চাও আকণ্ঠ । তোমার প্রিয় নীল রঙে আমি পেয়েছিলাম একটা আকাশ - আর তুমি পেয়েছিলে একটা নদী । সেই থেকে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকা শুরু ।
আকাশ আর নদী ।
অনেক পরে জানলাম নদীর জল আর আকাশ- এদের কারো নিজের কোন রঙ নেই । নদী থাকলো , আকাশ থাকলো , আমরাও থাকলাম - শুধু আমাদের সেই নীল রঙ কোথায় হারিয়ে গেলো !
শরতের কোন এক সকালে , যেদিন রোদ্দুর ঝরে পরছিলো তোমার মুখের হাসিতে - আমি বলেছিলাম , " সাদা রঙটা বড়ো ভালো লাগে আমার " - তুমি হেসে উঠে আমার কাছে চেয়েছিলে সাদা রঙ । তোমার ইছা ছিলো সাদা পায়রা হওয়ার । আমাকে কেন্দ্র করে উড়তে চেয়েছিলে - দিনান্তে ফিরতে চেয়েছিলে আমার বুকে । আমি খুশি হয়েছিলাম । কথা দিয়েছিলাম তোমাকে , " আমার মৃত্যুর পর আমার শরীরে থাকা সাদা কাপড় দেখেই চিনে নিতে পারবে আমায় – দিনান্তে নিজের ঘরে ফিরতে পারবে "।
কিন্তু না তুমি পারলে পায়রা হতে , না এলো আমার মৃত্যুর সাদা কাপড় - মাঝখান থেকে আমাদের সাদা রঙটাই শুধু হারিয়ে গেলো ।
চোখের বাইরে ঝাপসা হলে , ভিতরের চাপা পরে থাকা সাদা রঙটা এসে দেখা দেয় । নিজেকে নিজেই বলি - সাদা রঙ আছে , আমি আছি , তুমি আছো । এমন নয় যে , " সকলি ফুরালো স্বপন প্রায় " । শুধু ভয় হয় , " যে পথে যেতে হবে , সে পথে তুমি একা , নয়নে আঁধার রবে , ধেয়ানে আলোর রেখা " । পারবো কি ?
দৃষ্টি ঠিক হয় - একদম স্বছ কাঁচের মতো , সামনে দেখি ধুলোর আস্তরন পরা এক ধূসর পর্দা ।
এতো
ধুলো
? জীবনের
এতো ধূসরতা ?
মনে পরে একদিন তুমি বলেছিলে টকালো লাল রঙ তোমার বড়ো প্রিয়। আমার ভালো লেগেছিলো তোমার লাল রঙের কোমল ঠোঁট দুখানি । ভেবেছিলাম তোমার সেই ঠোঁটের কোমলতায় আর উষ্ণতায় জীবন কাটাবো । তুমি ভয় পেয়েছিলে যে তোমার ঠোঁটের কোমলতা হারালে আমার কষ্ট হতে পারে ।
তুমি
বলেছিলে
, খোলা
মাঠ
তোমার
প্রিয়।
আমি হতে চেয়েছিলাম দীগন্তের প্রান্তর । অন্ধকারের রাত শেষ হলে ভোরের লাল সূর্য হয়ে তুমি আসবে , সারাদিন আমার উপর দীপ্তি ছড়াবে - প্রয়োজনে , " প্রখর তপন তাপে " । আমার সব গ্লানি , মিথ্যাকে পুড়িয়ে আমাকে করে তুলবে কঠিন আর অকাট্য সত্য । কারন আমি যে জানি , " দিনান্তে তুমি আবার লাল হয়ে উঠবে । নেমে আসবে আমার বুকে । পৃথিবীর মানুষ দেখবে , সূর্য অস্ত গেলো। সকলে যখন দেখবে " দিনের শেষে ঘুমের দেশে , ঘোমটা পরা ঐ ছায়া " - সে তো ছায়া নয় । বরং ,
" তোমার ক্লান্তি আর আমার অন্ধকার -
সব মিলেমিশে একাকার ,
আর কোন ভয় নাই ,
ভয় নাই পথ হারাবার ।"
তবু আমি মাঠ হতে পারিনি , তুমিও সূর্য হতে পারোনি - আমাদের লাল রঙটা থেকে গেলো মাথার ভিতরে , যেখানে কোন এক বোধ কাজ করে ।
আমার
হাহাকার
করা
দুপুর
অথবা
ক্লান্ত
সন্ধায়
আমার
চেতনা
আর
অবচেতনের
মধ্যে
কি
দেয়া নেওয়া
হয়
- কে
জানে
?
একদিন
তোমাকে
বলেছিলাম
গোলাপী
রঙের
প্রতি
আমার
একটা
টানের
কথা
।
দুধ
আর
আলতাকে
মেশালে
যে
রঙ
হয়
, যাকে
বলে
PINK .
তুমি
হেসেছিলে-
বলেছিলে
, " এইটাই
আমাদের
রঙ
– ভিতরের
মনের সাধনার
রঙ
- একে বাইরে থেকে এনে সাজাতে হয়না - ভিতর থেকে সে এমনি সেজে ওঠে , তাকে আর কোনকিছুর সাথেই তুলনা করা যায়না । "
আমি
অবাক
হয়েছিলাম
- তুমি
বলেছিলে
, " এ একদিনের
নয়
- কালের
যাত্রার
ধ্বনি
শুনতে
হয়
- মনে
মনে
অজস্র
মৃত্যুকে
পাড়
হয়ে
আসতে
হয়
- শরীরের রক্ত যখন ফ্যাকাশে হয়ে আসে , মনের চাওয়া পাওয়ার উপরে যখন শান্তির সাদা আস্তরণ পড়ে - অন্তর যখন অন্তরকে বলে , " হে ঐশ্বর্যবান , তোমারে যা দিয়েছিনু , সে তোমারই দান , গ্রহন যতো করেছো ঋনী ততো করেছো আমায় " - তখন শরীরের সেই রক্ত আর মনের শান্তি - মিলেমিশে হয় এক গোলাপী স্বপ্নের দেশ - যা আগে কখনো হয়নি আর পরেও কখনো হবেনা - সকলের কাছে যা অস্ত্বিত্যহীন - আমাদের জন্য সেটাই অস্তিত্বের মূল - নাম তার ," NEVERLAND " ।
কিন্তু
কবে
আসবে
সেই
NEVERLAND ? জানা ছিলোনা কারোও । আমি তাই নামে একটু বদল এনে বলেছিলাম , “ DESTINIED NEVERLAND “ .
সেসব কবে কার কথা ! দৃষ্টি ঝাপসা হলেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে । সন্ধ্যা নামে - একটা অস্পষ্ট অবয়ব আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে হতে তুমি হয়ে আসছো । " মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দর বেশে এসেছো " । আমি শরীরের সমস্ত জোর খাটিয়ে উঠলাম । পরিষ্কার দেখছি , " দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার , গানের ওপারে " । এতোদিন ভেবেছি ," পারি যদি , অন্তরে তার ডাক পাঠাবো " । কিন্তু আজ আমি দুই হাত বাড়িয়ে তোমায় ডাকছি - তুমি আসছো - তুমিও হাত বাড়ালে - হাতে হাত - একে অপরের । আমরা জড়িয়ে ধরলাম একে অপরকে । আবার ফিরে পাচ্ছি আমাদের মনে অগাধ শান্তি । চারদিক আস্তে আস্তে গোলাপী হয়ে আসছে - তোমার কোমল উষ্ণ লাল ঠোঁটের স্পর্শ আমার কানে - মৃদু স্বরে বললে , " কোনদিন জাগিবে না আর " । আমি তোমার বুকে মাথা রাখলাম । মাথায় এখন অগাধ শান্তি । তুমি ইশারা করলে । দেখলাম । আমার দেহখানি পড়ে আছে । আমরা চলেছি DESTINIED NEVERLAND –র দিকে ।
THANKS.
S.V.O
NOW READ--চিঠি
0 Comments