কুকুরের আইনি অধিকার
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থান কাল , পাত্র- নানা লোকজন কুকুরের জন্য সেবামূলক কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন নানা ধরনের লোকের হাতে নানা ভাবে বাধা পাচ্ছেন ।
অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কাজের বিনিময়ে জুটছে নানারকম অসামাজিক ব্যাবহার , হুমকি , মারধোর এমনকি কিছু ক্ষেত্রে লোক এনে বিভিন্ন সমাজসেবীর বাড়িঘর , অফিস , এমনকি পরিবারের উপর হামলা চালানো হচ্ছে ।
এটা অত্যন্ত ভয়ের ব্যাপার – কারন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের ভালো কাজগুলো সাধারন কিছু মানুষ একা , বা কয়েকজন মিলে নিজেদের টাকায় ফান্ড করে সেই টাকা দিয়ে কিছু সমাজসেবামূলক কাজ করেন – এক্ষেত্রে তাদের কোন আর্থিক লাভের ব্যাপার নেই , কোন স্বীকৃতি নেই – তার উপর যদি অকারনে অন্যের থেকে আক্রমন আসতে থাকে , তাহলে অনেকেই আগামীদিনে অনেক কাজের থেকে নিজেদের দূরে রাখবো এবং আমাদের আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে যেতে হবে ।
কিন্তু হাল ছাড়ার আগে আমরা অন্তত জেনে রাখি যে একজন স্বাধীন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমাদের দেশের সংবিধান , বা আদালত বা সরকার – আমাদের জন্য কি কি দায়িত্ব আর অধিকার দিয়েছেন , যেগুলোর ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানিনা – ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু অতিরিক্ত ঝামেলা সহ্য করতে হয় ।
( দুই জন কোনমতে বেঁচে আছে - সাড়ে তিন মাসের জীবন - কিন্তু তার মধ্যেই ওদের শারীরিক ভাবে মেরে আহত করা হয়েছে )
ওদের বাঁচিয়ে তোলার জন্য বনগাঁ পশু হাসপাতাল এবং LOVE AND CARE এর সকলকে ধন্যবাদ - PROLAY SANKAR DEY (S.V.O)
বাস্তব ---
১) রাস্তার কুকুরদের খাওয়াতে গেলে নানারকম অসামাজিক কথা , হুমকি , এমনকি শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয় ।
২) রাস্তার কুকুর চিৎকার করলে , অনেকেই তাদের সহজভাবে একটু তাড়িয়ে না দিয়ে , এমন ভাবে আঘাত করে , যাতে কুকুরটি যথেষ্টভাবে আহত হয় এবং তার প্রতিবাদ করলে , নানারকম ভাবে হেনস্থা করা হয় ।
৩) কুকুর রাস্তায় মল-মুত্র ত্যাগ করলেও তাকে নানারকম ভাবে আঘাত করা হয় এবং প্রতিবাদীকে হেনস্থা করা হয় ।
৪) অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কমপ্লেক্সে থাকার ব্যাপারে কুকুর নিয়ে আপত্তি করা হয় বিভিন্নভাবে । এক্ষত্রে অনেকেই ভয় পাওয়া , পরিচ্ছন্যতার কথা বলেন , আবার ক্ষেত্রে হয়তো পোষা কুকুর রাখা যায় , কিন্তু মল-মুত্র বা বমি করাকে কেন্দ্র করে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয় বা আর্থিক ভাবে ফাইন দিতে হয় ।
এরকম হাজার সমস্যা আছে , যা লিখে শেষ করা যাবেনা । কিন্তু এগুলো আটকানোর জন্য কি কি করা যায় আর কি ভাবে করা যায় আর কেনই বা সেগুলো প্রাসংগিক – সে ব্যাপারে ভারতের সংবিধানে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে এবং আদালত , সরকার বা নানারকম সরকারী দপ্তরের মাধ্যমে আমরা সকলেই সেই আইন গুলি মেনে চলতে বাধ্য ।
যেভাবে কুকুর বা পরিবেশপ্রেমী হিসাবে আমরা ভালো কিছু করার জন্য লড়তে পারি ।
প্রথমেই বলি আমাদের কাজটার দুই দিক । এক হলো কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর সেবা করা আর দুই হলো আমাদের কাজের মাধ্যমে অন্যকে অনুপ্রানিত করা – যাতে আরো অনেকে এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসে ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন লোকদের থেকে যে যে বাধা গুলো আসে –তার অনেকটাই আসে সঠিক বিষয় না জানার জন্য অথবা কিছু লোকের উস্কানিতে । এই উস্কানি দেওয়া লোকগুলোর বিরুদ্ধে আমরা যেমন সংগঠিত ভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারি – তেমনি লোকের ভিতর সচেতনতা ছড়ানোর কাজও করতে হবে ।
সকলেই আমাদের কাজে সাহায্য করবে , তা নয় । কিন্তু অযাচিতভাবে যাতে কাজে বাধা না দিতে আসে , বা অন্যায় ভাবে বাধা দিলে তার আইনি পরিনাম কতো ভয়ংকর হতে পারে – সেই ব্যাপারে জানতে পারলে , অনেকেই আমাদের কাজে বাধা দেবার আগে দশবার ভাববেন ।
কুকুর , বন্যপ্রানী বা পশুপ্রেমিক বা পরিবেশপ্রেমীর সাংবিধানিক অধিকার ।
১) ১৯৬০ সালের PREVENTAION OF CRUELTY TO ANIMALS ACT এর ১১ নম্বর SECTION এ ভারতের যাবতীয় জীবিত প্রানীদের উপর কোন রকমের অত্যাচার , যেমন আঘাত করা , খাদ্য , পানীয় বা বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা , আটকে রাখা , কেনা –বেচা , বিরক্ত করা বা এই ধরনের কাজগুলোকে নাগরিকের জন্য অপরাধ হিসাবে গন্য করা হয় । কোন বেক্তি এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত থাকলে INDIAN PENAL CODE- র ধারা ৪২৮ এবং ৪২৯ অনুসারে তার জেল এবং জরিমানা দুই হতে পারে । পশু-পাখি , কীটপতঙ্গ বা আরো অন্যান্য জীবকুল যেহেতু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে , তাই কোন ভাবে এদের কোন রকম বিরক্ত করলে , এটা যে শুধুমাত্র এদের জীবনকে ধ্বংস করা তাই নয় , বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ সংক্রান্ত নানা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় ।
২) এছাড়া INDIAN ANIMAL AND ENVORNMENT DEPARTMENT এর 51A(G) ধারা অনুসারে , ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রতিটি জীবকুলের জন্য সমব্যাথী হওয়া এবং সেবা করা একটি মৌলিক দায়িত্ব ।
ভারতের সংবিধানে “ সেবা “ – শব্দের মুল্য অপরিসীম ।
এই সেবা শব্দের সাথেই জড়িয়ে আছে ভারতের সংবিধান স্বীকৃত নিজের ধর্ম পালনের অধিকার । জাতি ধর্ম আর সংস্কৃতি মেনে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পশু , পাখি , নদ –নদী কে সেবা করা , অর্থাৎ তাকে নানাভাবে রক্ষা করা আমাদের ধর্মীয় অধিকারের মধ্যেই পড়ে ।
এক্ষেত্রে আপনার কাজে কেউ বাধা দিলে , তা যেমন আমাদের দেশের প্রানী সম্পদ আইনের অপরাধ হিসাবে দেখা হয় , তেমনি এটা আপনার ধর্মীয় আচরনের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হিসাবে গন্য হয় – যা আমাদের সংবিধানের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে দেখা হয় ।
পশু -পাখি , নদ -নদী , গাছ বা পাহাড়ের মতো বিষয়ে আপনার ধর্মীয় অধিকারের বিষয়ে ভালো করে জেনে নিন ----
১) সেবা পরম ধর্ম বা ধর্মীয় আচরন স্বাধীনভাবে পালন করার অধিকারে – আপনাকে এদের সেবা বা রক্ষা করার অধিকার দেওয়া হয়েছে – এর দ্বারা আপনি কোন নদী পরিস্কার করতেই পারেন , গাছ লাগাতে বা তাকে রক্ষা করতে পারেন বা কোন জীবিত প্রানীর সেবা করতে পারেন ।
২) যদিও এমন বিষয় প্রায় রোজই হয় – কিন্তু ধর্মের স্বাধীনতার নামে কেউ যদি পশুবলি দেয় – সেটা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
RWA – এর ফুল ফর্ম হলো – RESIDENTIAL WELFARE ASSOCIATION - যারা FLAT / COMPLEX AREA তে থাকেন , তারা এই ধরনের ব্যাবস্থার সাথে খুবই পরিচিত । অনেক সময় এখানে সম্পত্তি কেনার আগে বা পরে জানান যে “ এই অঞ্চলে কুকুর আনা বা রাখা যাবেনা , অথবা কমপ্লেক্স এরিয়াতে কোন রাস্তার কুকুরকে কিছু খাওয়ানো যাবেনা বা শেল্টার দেওয়া যাবেনা ।
এক্ষেত্রে সাধারনভাবে যুক্তি দেওয়া হয় –
১) এরা নানাভবে জায়গা নোংরা করে এবং এর থেকে নানারকম রোগ ছড়াতে পারে ।
২) শিশুরা ভয় পায় ।
৩) এদের ডাকাডাকিতে বয়স্ক বা রোগীদের অসুবিধা হয় ।
এই যুক্তিগুলোকে আমাদের সংবিধান এবং বিচার ব্যাবস্থা অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন এবং তাদের মত হলো ---
১) মালিকানাধীন বা রাস্তার কুকুর বা অন্য কোন প্রানী যদি মল-মুত্র ত্যাগ করে কোন জায়গা নোংরা করে , তবে সেটা পরিস্কার করার দায়িত্ব , সেই নির্দিষ্ট বেক্তি বা সংস্থার , যারা এর জন্য আর্থিকভাবে চুক্তিবদ্ধ । কিন্তু তার জন্য মালিক বা সেবকের থেকে কোনভাবে কোন টাকা নেওয়া যাবেনা । এই টাকা খরচ হবে RESIDENTIAL WELFARE ASSOCIATION ----DEVELOPMENT AND MAINTAINCE FUND থেকে ।
২) কুকুরের ডাকের ক্ষেত্রে কোন বেক্তি কোনভাবে বাধা দিতে পারেন না । অসুস্থ বা বয়স্ক বেক্তির ক্ষেত্রে কুকুরের ডাকের থেকে কোন সমস্যা হলে , আপনি মানবিক ভাবে মালিকবিহীন কুকুরকে সরিয়ে দিতে পারেন – দরকারে আপনি তাকে ভয় দেখাতে পারেন – কিন্তু কোনভাবেই তাকে আঘাত করা যাবেনা আর ভয় দেখানোর নামে এমন কিছু করা যাবেনা , যে সে আতংকিত হতে পারে । কারন আপনার যেমন অধিকার নেই কাউকে আতংকিত করার , তেমনি আতংকিত প্রানী অন্যের বিপদের কারন হতে পারে । কুকুর যদি বেক্তি মালিকের হয় –তো কোনভাবেই মালিক বা তার পরিবারের উপর কোন চাপ দেওয়া যাবেনা । বরং কুকুরের ডাককে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা বা বিপদের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে ।
৩) পার্ক , লিফটের মতো সুবিধা থেকে কুকুরকে কোনভাবেই বঞ্চিত করা যাবেনা আর এক্ষেত্রে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবেনা । তবে সকলে মিলে আলোচনার মাধ্যমে কুকুরের জন্য পার্ক বা এই ধরনের ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে একটা সময় নির্দিষ্ট করা যেতে পারে । মালিকবিহীন কুকুর বা অন্য প্রানীকে খেতে দেবার ব্যাপারেও সকলে আলোচনা করে নির্দিষ্ট জায়গা স্থির করা যেতে পারে – কিন্তু আটকানো বা বাধা দিলে আইনমতো ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে ।
৪) শিশুদের ভয় পাওয়ার ক্ষেত্রে , অহেতুক কোন ভয়ের কারন বা কাল্পনিক কিছু না বলাই ভালো – বরং কুকুর সহ পরিবেশের অন্য অনেক কিছুই যে বাস্তবে ক্ষতিকর নয় – সেটা সঠিকভাবে বোঝাতে হবে – যাতে শিশুর পরিবেশগত ভাবে সম্পূর্ণ বিকাশ হয় । তবে কুকুরের মালিক বা রাস্তার কুকুরের সেবকদেরও দায়িত্ব থাকে শিশুদের সাথে পশুপাখির পরিচয় করানো এবং তাদের নিরাপদ রাখা ।
পরিশেষে পশুসেবকদের একটা আলাদা মানবিক দায়িত্ব থাকে , যে তারা ক্রমাগত প্রচারের মাধ্যমে আরো বেশী মানুষকে সচেতন করবেন এবং নিজেদের বিভিন্ন কাজে সহ নাগরিকদের যোগদান করাবেন – এতে একদিকে যেমন মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে আরো ভালো যোগাযোগ হবে , তেমনি অনেক মানুষের উদ্যোগের কারনে বিপুল পরিমান কাজের চাপ কমবে তেমনি মতের আদান প্রদান , আর্থিক সাহায্য বা অংশগ্রহনের মাধ্যমে আরো উন্নত ব্যাবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব ।
0 Comments