DESTINY IS NEVERLAND OR NEVERLAND IS DESTINY. 
PEN- PROLAY.
INK- ANANYA. 
CON= +91-9732803838.
S.V.O

লেখাটা পড়তে শুরু করার আগেই জেনে নিন যে ,  বেক্তিগত ভাবে আমি কমিউনিস্ট পার্টির  কোন সদস্য তো দূর , সমর্থক ও নই- তাই লেখাটা দয়া করে নিরপেক্ষ ভাবে পড়বেন বা অন্তত এটা ভাববেন না যে আমি কারো দালালি করছি , কারন যাদের জন্য লিখছি , তারা এখন ব্যাস্ত সম্পুর্ন অজানা অচেনা কারো জন্য অক্সিজেন বা রক্ত যোগাড় করতে এবং অবশ্যই একেবারে বেক্তিগত ভাবে  নিজের  প্রানের ঝুঁকি নিয়ে । 
যে সব মানুষেরা কোন প্ররোচনা ছাড়াই  বা কোন  লাভের আশা না করেই দিনের পর দিন , রাতের পর রাত -  জাতি , ধর্ম , গরীব , ধনী ,  রাজনীতির পরিচয় ভুলে এই বিশ্ব  মহামারীতে নিজেদের শেষ বা সামান্য সম্বল ছেড়ে আমার , আপনার বা আমাদের মতো আরো অনেকের জন্য আজ উদভ্রান্তের মতো  গ্রাম থেকে শহর বা ব্লাড  ব্যাংক থেকে শ্মশানে ছুটে চলেছেন নিজেদের জীবনের কথা না ভেবে  , তাদের আর যাই হোক , আমার মতো একজন সামান্য মানুষের  থেকে সার্টিফিকেট লাগেনা । 
 সংক্রামক রোগে যাদের মরার ভয় নেই - তারা  কিন্তু সাধারন মানুষের বিচারের অনেক উপরে ।
আপনাদের ভাবতে অবাক লাগেনা যে আমাদের বেশিরভাগ মানুষ যখন ভোট আর মিডিয়া  নিয়ে লেকচার দেখছি , মজা করছি , রেসাল্ট নিয়ে গবেষণা করছি , ঠিক সেই সময়ে আমার আপনার এলাকার কিছু ছেলে মেয়ে নেমে পড়লো অন্যদের কে বাঁচাতে এই বিশ্ব মহামারীতে নিজের বা  নিজেদের পরিবারের কথা না ভেবে ? তাও আবার বলতে গেলে কোন প্রশিক্ষন বা নিরাপত্তা না নিয়েই ?  
কতোজন ছিলো ওরা শুরুতে ?  কে বলেছিলো এই অসম লড়াইতে নামতে ?
আর তাও এমন সময়ে , যখন রাজ্যে রাজনীতির পালাবদল হয়েছে , এবং সেই পালাবদলের ধাক্কায় তাদের আর কোন স্থানই নেই সেভাবে । 
রাজনীতি তো জীবনের বাইরে নয় - তো জীবনের ভয় কার না থাকে ? 
রেড  ভলেন্টিয়ার   রাজনীতির পরিচয় টা অতি জরুরী - কারন তারা একটি নির্দিষ্ট রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন , কিন্তু মজার কথা এটাই যে ,  তারা এই মহামারীতে যে কাজ করছেন তা কিন্তু সবরকম রাজনীতির বাইরে গিয়ে ।সকলের জন্য - এবং আজকের দিনে , যখন অনেকের পেটে ভাত নেই - এই কঠিন সময়ে একদম বিনা পয়সায় ।  
সারা দেশ যখন রাজনীতি নিয়ে উত্তাল , এরা কেন রাজনীতি ছেড়ে সকলের পাশে দাঁড়াতে এলো ? 
এদের কি জীবন নেই ?  পরিবার নেই ? কোন স্বপ্ন নেই ?  এদের ভালোবাসা নেই  ?  কিছুই নেই নাকি বিবেকের হিসাবে কঠিন সময়ে সব ভুলে যেতে হয় ? 
ভুলতে ভুলতে কতোদূর গেলে নিজের সবকিছু ভুলে রেড ভলেন্টিয়ার হওয়া যায় ?  

প্রশ্নটা এটাই যে , এই যে রেড ভলেন্টিয়ার রা এতো কিছু করছেন - কোথাও মাইলের পর মাইল্ জল কাদা পেরিয়ে রাত দুপুরে অক্সিজেন নিয়ে ছুটছেন বা কাউকে রক্ত দিচ্ছেন বা কোথাও শবদাহ করছেন - বিনিময়ে আমরা নাগরিক সমাজ তাদের কিছু সামান্য শুকনো ধন্যবাদ ছাড়া আর কি দিয়েছি ?  আমাদের কি কিছুই দেবার নেই - নাকি চিন্তা শক্তি হারিয়ে গেছে ? 
 এদের সকলের ভাত জোটে রোজ ? সকলে কি নিজের বাড়িতে থাকে ? লকডাউনের বাজারে কারো কি বাড়ি ভাড়া বা পরিবারে কারো চিকিৎসা আটকে নেই ? সারাদিন যে মানুষ টা অন্যের জন্য পাগলের মতো ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে , শেষে নিজেই রক্ত দিলো - তার কি কিছুই পাওয়ার নেই ? 
আমরা হয়তো জানার দরকার মনে করিনি । কারন ওরা তো রেড  ভলেন্টিয়ার । 

 কিন্তু  এভাবে আর কতোদিন চলবে ?  কতোদিন ওরা সামান্য কয়েকজন  এই জরাজীর্ণ সমাজ বা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাকে টেনে নিয়ে যাবেন ?  
গরীব বা অসহায় মানুষের কথা একেবারেই আলাদা । কারন তারা তো নিজের অজান্তে সারা জীবনের ভলেন্টিয়ার  । 
কিন্তু আপনারা যারা ,  সারা জীবন টাকার গরমে চললেন ,  নিজেদের স্বপ্নের জীবনের  পরিকল্পনা করে রাখলেন , বিলাস বহুল আবাসনে থাকলেন ,  নিরাপত্তার জন্য প্রাইভেট  এজেন্সিকে টাকা দিলেন , বা আজো বেসরকারি নার্সিংহোমে লাখ লাখ টাকার  বিল করছেন ---কোথায় গেলো আপনাদের জীবনের মান ? 
কেন হাড় হাভাতে ঘরের ছেলে মেয়েকে গুলোকেই দরকার হয় দামী আবাসন থেকে আপনাদের সংক্রামক রোগীকে বের করে আনতে ? 
সমাজে যাদের মুল্যহীন ভেবেছিলেন , আজ আমি , আপনি বা আমরা যখন রোগের কারনে অস্পৃশ্য ,  তখন সেই বাতিলের দলের থেকেই কিছু মানুষ আজ আমাদের রক্ষ্যা করতে এসেছেন রেড ভলেন্টিয়ার  নাম নিয়ে । 

আমাদের তথাকথিত সভ্য নাগরিক সমাজের থেকে আর কবে ওদের হয়ে কথা বলবো - ওদের থেকে সুবিধা নিতে নিতে , ওদের প্রান গুলো  সব শেষ হয়ে গেলে ?  নাকি আমরা ভেবে নিয়েছি যে আমাদের সেবা করাই ওদের কাজ আর এই কাজ করতে গিয়ে ওদের প্রান গেলে - ভারতীয় কমিউনিস্ট দলের থেকে তাদের নামে একটা লাল কাপড়ের বেদী বানিয়ে " অমুক বা তমুক অমর রহে " - বললেই আমরা একটু নীরবতা পালন করবো আর সব দায় থেকে মুক্ত হবো ? 
এভাবে তো দায় থেকে বাঁচা যায়না - বাঁচতে গেলে বাঁচাতেও হয় । 
মনে রাখবেন বিদেশের ভিসা বন্ধ আর দেশের পবিত্রতম নদীতে এখন লাশ ভাসছে । আমাদের বাঁচতে গেলে এখানেই বাঁচতে হবে , আর  সকলের সাথেই বাঁচতে হবে । 
রেড ভলেন্টিয়ার রা কোন অন্য গ্রহের প্রানী নয় - ওরা যদি সবকিছু ভুলে প্রতিটা মানুষকে বাঁচানোর চেশ্টা করতে পারেন , তাহলে আমরা সভ্য নাগরিক সমাজ সামান্য কিছু ভুলে ওদের হয়ে কিছু দাবী করতে পারিনা  ? 
নাগরিক সমাজের  বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে টীকাকরন চলছে এবং বাস্তব হলো এই যে এখন আমাদের দেশে সারা বিশ্বের থেকে যেভাবে ত্রান  আসছে , তাতে মহামারী সংক্রান্ত অভাব খুব বেশি থাকার কথা নয় । 

কোন দল সরকারে আছে , কে নেই - এসব আলোচনা ছেড়ে সহজ ভাবনাতে আসা উচিত । কারন সরকার মানুষের জন্য আর মানুষ না বাঁচলে - সবই মূল্যহীন । 
নাগরিক সমাজকে দাবী করতে হবে - 
 * যেভাবেই হোক , খুব দ্রুত রেড ভলেন্টিয়ারদের তালিকা বানিয়ে তাদের টীকাকরনের ব্যাবস্থা করতেই হবে । 
* প্রতিটা রেড    ভলেন্টিয়ারদের  বা তাদের পরিবারের লোকেদের জন্য সরকারী বা বেসরকারী ক্ষেত্রে বিনামুল্যে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে । 
* মহামারীতে জীবন বাজি  রেখে যারা অপরের জন্য যারা লড়াই করছেন , তাদের ঠিক ঠাক নিরাপত্তা  ব্যাবস্থার যেন কোন অভাব না হয় । 
* রেড ভোলেন্টীয়ার রা  সাধারন মানুষ এবং তারা অন্য সব পরিচয় সরিয়ে রেখে মানুষের জন্যই কাজ করছেন - তাই তাদের হয়ে এই কথা গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ত্ব আমাদেরই। 

তাই আপনি যেই হোন বা যে মতবাদেই বিশ্বাস করুন - আপনি ওদের নিরাপত্তার জন্য দাবী তুলুন - কারন  ওরা বাঁচলে , অনেকেই বাচবে- কিন্তু এই অবস্থায় ওরা না থাকলে আমি বা আপনি নাও বাঁচতে পারি। 

মনে পরে প্রথম দিনের কথা - ফেসবুকের লিঙ্ক দেখে যোগ দিলাম ওদের " হোয়াটসাপ " গ্রুপে ।  রাত ১ টা পর্যন্ত দেখলাম বেশ ভালোই মেসেজ আসে আর তার  সমাধানের চেষ্টাও চলছে । 
অবাক হলাম পরদিন সকালে ৭০০+ মেসেজ দেখে । 
সারা রাত না ঘুমিয়ে এরা ব্লাড , অক্সিজেন আর বেডের খোজ করেছে এভাবে অন্যের জন্য ?  তাও আজকের বাজারে বিনা স্বার্থে  ? একেবারেই অপরিচিত বা  অজানা লোকের জন্য ? 

নিজে নিরাপদ বোধ করলাম - এখন কোভিডের অনেক ব্যাপারেই অন্যদের বলি , " সোসাল মিডিয়ায় রেড ভলেন্টিয়ারদের থেকে জেনে নাও " । 
আর এনাদের রাজনীতির পরিচয় থাকতে পারে অন্য আর  পরিচয়ের মতো । কিন্তু বহু মানুষ আছেন , যারা বিরোধী  রাজনীতি করেও এই কঠিন সময়ে রেড ভলেন্টিয়ারদের পাশে আছেন - তার মুল কারন খুব সহজ - যে মানুষগুলো এই ভয়ংকর সংক্রামক রোগের সময়ে অজানা অচেনা মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন - তারা খারাপ কাজ করছেন না । 

আমরা সকলেই যে ওদের ফান্ডে টাকা দিতে পারবো , বা কিট কিনে দিতে পারবো - এটা নিশ্চই আমাদের আজকের দিনের সমাজ এবং কাজের গতি প্রকৃতির উপর দাঁড়িয়ে সম্ভব নয় - কিন্তু ওদের হয়ে ওদের সামান্য ভ্যাক্সিন বা ওদের পরিবারের সুরক্ষ্যার জন্য দাবী তো করতেই পারি । 
ওরা আছে , তাই আমরা অনেকে নিরাপদ আছি । ওরা আছে তাই  বাংলার নদীতে এখনো লাশ ভাসেনি। কিন্তু ওরাও মানুষ - তাই ওরা বেঁচে  থাকতে থাকতে ওদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন । 
আর পরিশেষে একটা কথা লিখি , সেই ছোটবেলার থেকেই শুনে আসছি যে আমাদের এই রাজ্যটা একেবারেই পিছিয়ে । এখানে বলতে গেলে কিছুই নেই  যা যা দিল্লী , মুম্বাই বা হালের ব্যাঙ্গালোরেও পথে ঘাঁটে পাওয়া যায় ।  
কিন্তু আজ এই মহামারীর সময়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখছি আমাদের রাজ্যের বহু তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত মানুষ তাদের ফেলে রেখে যাওয়া বাবা , মা বা পরিবারের সকল দায়িত্ত্ব  রেড ভলেন্টিয়ারদের হাতে তুলে দিয়েছেন - সাথে হাজার হাজার ধন্যবাদ । 
ভালো বা খারাপ - সবকিছু মিলিয়েই সমাজ হয় । কঠিন সময় না আসা অবধি অপেক্ষ্যা করতে হয়  । যারা দিল্লী , মুম্বাই বা দেশের আরো অনেক প্রান্তে আছেন , তারা অবশ্যই সেখানকার প্রশংসা করবেন - বাংলায় যা নেই , অবশ্যই সেগুলো বলবেন - কিন্তু অযথা হতাশ হবেন না । 
সারা ভারতকে বরং  জোর গলায় বলে দেবেন - বাংলার মাটিতে রেড ভলেন্টিয়ার রা আছে - তারা গ্রাম থেকে গ্রাম , শহর থেকে শহর ,  বস্তি থেকে বিলাসবহুল আবাসন - ছুটে চলেছেন শুধু মানুষকে বাঁচানোর নেশায় - বলবেন যে , এই সব পাগলের দল কখনো না খেয়ে বা না ঘুমিয়ে , নিজের বা নিজের পরিবারের কথা না ভেবে , কখনো বা  সামান্য নিরাপত্তা না নিয়ে - এই বিশ্ব মহামারীতে নেমছে মানুষকে বাঁচাতে । 
অহংকারের সাথে বলুন , আমরা বাঙালী - আমাদের রেড ভলেন্টিয়ার আছে - আমরা সারা ভারতে ছড়িয়ে আছি - কারন আমরা জানি কোথাও না কোথাও , কোন একজন রেড ভলেন্টিয়ার জেগে আছেন আমার বা আমাদের পরিবারের জন্য । 
আপনি বা আপনারা নিশ্চিত থাকুন - বাংলায় অনেক কিছুই নেই - কিন্তু রেড ভলেন্টিয়াররা আছেন - আর ওরা থাকলে আশা করি আমি বা আপনি অথবা সকলেই থাকবো । 
  

https://www.facebook.com/SVO-POINT-102832565293309/


THANKS. 
 S.V.O