PEN- PROLAY.
INK- ANANYA.
S.V.O
বর্তমান ভারতের নানা প্রান্তে নানান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানাভাবে খুব সহজ সরল কথা বা চিন্তাধারার প্রচার চালাচ্ছেন একদম সাধারন মানুষের মধ্যে ।
১) সাপে কামড়ালে ওঝা বা তন্ত্র মন্তের দ্বারস্থ না হয়ে সরকারী স্বাস্থকেন্দ্র বা হাসপাতালে যেতে হবে ।
২ )টিবি বা কুষ্ঠ রোগ - কোন পাপের ফল নয় - বরং সঠিক ভাবে চিকিৎসা করালে খুব ভালোভাবে রোগমুক্তি হবে ।
৩) কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে ত্যাগ করা বা বিক্রী করা যাবেনা ।
৪) কন্যা সন্তান হলে তার সঠিক শিক্ষ্যার ব্যাবস্থা করে তাকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে ।
শতাব্দী প্রাচীন যে বিশ্বাসের উপর এই সমাজ দাড়িয়ে আছে - উপযুক্ত পরিকাঠামো , অর্থ , শিক্ষ্যা এবং জীবিকার মাধ্যমে মূলগত সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া - কেবল কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সামান্য কিছু চেস্টার মাধ্যমে এই বিপুল পরিমান জনসাধারণকে একটা সুস্থ , স্বাভাবিক বা সুচিন্তিত ব্যাবস্থার মধ্যে এনে কোন দ্রুত এবং কার্যকরী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে নতুন সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা অসম্ভব ।
কারন প্রয়োজনের তুলনায় চেষ্টার পরিমান সামান্য । তাছাড়া বেশীরভাগ সংগঠন্নগুলির কোন সঠিক আর্থিক পরিকাঠামো নেই - এনাদের অনেকের বাড়ির লোকের মতে এনারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান ।
তবুও এনারা চেস্টা করেই চলেন কোন সামান্য ধন্যবাদের আশা না করেই ।
এনাদের কথা বলতেই হয় , কারন এনারা সকলেই খুব পন্ডিত বা ধনী নন । যিনি কুসংস্কারের সাথে লড়ছেন , তিনি যে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তা নয় ।
যিনি নারীপাচারের বিরুদ্ধে সচেতন করছেন , তিনি যে খুব ভালো গোয়েন্দা - তা নয় ।
তবু নিতান্ত সাধারনভাবেই তারা নিজেদের মতো চেষ্টা করে চলেছেন ।
আসল কথা হলো মানুষের ভালো করতে হলে সবসময় শুধু তত্ত্ব আর যুক্তি বা সংখ্যাতত্বই যথেষ্ট নয় ।
সাথে সাথে আমাদের কিছু সামান্য মানবিকতা , সাহস আর চেষ্টার প্রয়োজন ।
এনাদের কথা না লিখলেও হতো । কিন্তু আমাদের সমাজে ইন্টারনেট আর স্মার্ট ফোনের কারনে একদল উদ্ভট এবং বিক্রীত শিক্ষিত শ্রেনীর জন্ম নিয়েছেন । এনারা সামনে ঘটা বাস্তবকে অস্বীকার করে কথায় কথায় গুগল খুলে কয়েকটা তথ্য দিয়ে পুরো সমাজ , অর্থনীতি , ইতিহাস , ভুগোল- কে মিলিয়ে মিশিয়ে এমন এক পরিস্থিতি বানায় , সেখানে যুক্তির চেয়ে চিৎকার বেশি হয় ।
এনারা চোখের সামনে ভিখারী দেখে না , প্রতিভাবান বেকার দেখেন না , উচ্ছেদ হওয়া হকার দেখেন না , সরকারী সম্পত্তি বা ব্যাবস্থা বিক্রী হয়ে যেতে দেখেন না - বাস্তবকে বুঝতে গেলে কিছু নুন্যতম শিক্ষ্যার দরকার হয় । কোনমতে কলেজ পাশ করে আর চট করে কিছু কাঁচা টাকা হাতে পেলে পা চেটে দেওয়ার লোক পাওয়া যায় । তাতে সাময়িক জাতে ওঠা যায় - কিন্তু শুধুমাত্র গুগল আর উইকিপিডিয়া থেকে যদি সব জানা যেত , লোকে খাটনি করে স্কুল কলেজে পা দিতো না । এইসব লোকেরা কথায় কথায় এমন সব উন্নতির সূচক দেখেন , যা সাধারন মানুষ খালি চোখে দেখতে পায়না ।
সম্প্রতি আমাদের দেশের এমন কিছু মানুষ একদম কঠিনভাবে মেনে নিতে শুরু করেছেন যে , " দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোকে সরকারের অধীন থেকে বাইরে এনে বেসরকারী সংস্থা বা বেক্তি মালিকানার কাছে বেচে দিলে - উক্ত সংস্থাগুলো নতুন করে জীবন ফিরে পাবে আর সাধারন মানুষও অনেক বেশী ভালো পরিষেবা পাবেন । কারন দেশের জল , স্থল , আকাশে , বাতাসে - সবখানে শুধুই লোকসান ।
একটু ভাবুন -" বেসরকারী সংস্থা গুলো কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রেই কিছু সরকারী বা সরকারের অধিনস্ত ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে তাতে নতুন করে আরো টাকা দিয়ে - সেখান থেকেই মুনাফার পথ খুঁজছে । তার মানে এই যে আপাত দৃষ্টিতে যে সরকারী ক্ষেত্রগুলোকে অলাভজনক বা মৃত বলে মনে করা হচ্ছে , সেগুলোর মধ্যে এখনো কিছু পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করে ভালো পরিষেবা দিয়ে আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ার অবস্থা আছে । "
কিন্তু আমরা অনেকেই ভেবে নিয়েছি , " এই সব সংস্থা গুলো মৃত " ।
বলতে পারেন ? পৃথিবীর কোন বেক্তি মালিক বা সংস্থা আজ পর্যন্ত কোন অ -লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছেন ?
আমরা এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা - তার একটা বড়ো কারন , " বাস্তব জীবনে আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে বেশিরভাগ সাধারন মানুষের যথেষ্ট ভোগান্তি সহ্য করতে হয় এবং পরিষেবা বলতে সত্যি তেমন কিছু নেই । "
এতে একদিকে যেমন সাধারন মানুষ তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন , তেমনি দপ্তরগুলোও সত্যিই হয়তো লোকসানে চলছে ।
অপরদিকে বেসরকারী ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে খুব সহজেই ভালো পরিষেবা পাওয়া যায় ।
এবার আপনি ভাবুন কোন স্কুলের সব ছাত্র বার বার ফেল করলে তার দায় কি হেড টিচার , টিচার বা ম্যানেজমেন্টের নয় ?
কোন দল খেলায় হারলে তার কোচ বা অধিনায়ক কি হারের সব দায় নিজেরা নিয়ে পদ ছেড়ে দেননা ?
তাহলে আজকের লোকসানে চলা দপ্তরগুলোর মাথায় কারা বসে ছিলেন বা আছেন ?
দপ্তরগুলো তো একদিনে এমন অবস্থায় আসেনি । প্রতি বছর সেখানে অডিট হয়েছে - বছরের পর বছর লোকসান দেখার পরেও কেন সংস্লিস্ট দপ্তরের মন্ত্রী বা রাজনীতির দল গুলি কেনো পদত্যাগ করেন নি ?
জনগনের করের টাকায় চলা দপ্তরগুলো যখন দিনের পর দিন লোকসানে চলেছে - কেন , কোন মন্ত্রী একবারও প্রকাশ্যে জনগণকে এই লোকসানের হিসাব দেননি ?
যদি অলাভজনক ক্ষেত্রকে লাভজনক না করতে পারেন , তো কেন আপনি বা আপনারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন ?
সরকারী সম্পত্তি কারো পিতৃ পুরুষের নয় - সেটা বেচে দেওয়ার আগে , জনগণকে জবাব দিতে হয় , কেন আর কি করে কোন দপ্তর লোকসানে চলছে , তার দায়ভার কার - এগুলো জানাতে হয় ।
শপিং মলের একজন কর্মচারীকে যেভাবে প্রতিটি পণ্যের হিসাব না মিলিয়ে দিতে পারলে - নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হয় , না দিতে পারলে যেভাবে অপরাধী হিসাবে জেলে যেতে হয় - লোকসানে চলা সরকারী দপ্তরের মন্তীরা কেন হিসাব না মিলিয়ে অন্য মন্ত্রীর হাতে দপ্তর তুলে দিয়েছেন ?
আর পরের মন্ত্রীই বা দপ্তর হাতে পেয়েই আগে লোকসানের কথা বলেননি ?
বেসরকারিকরণের স্বপক্ষে অনেকেই বলছেন , " কেবলমাত্র অনুদানের উপর ভিত্তি করে কোন উন্নতি হয়না " ।
বাস্তবে এসে হিসাব দিয়ে বলুন কে , কবে আর কাকে অনুদান দিলো ?
সারা দেশের মানুষের দেওয়া করের টাকায় সরকারী নেতা মন্ত্রীরা অনুদান নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন নাকি নেতা মন্ত্রীরা তাদের পিতৃ পুরুষের গচ্ছিত সম্পদ এনে আমাদের অনুদান দিচ্ছেন ?
আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন যে একজন এ পি জে কালাম বা দেবী শেঠির জন্য সরকার শিক্ষ্যাখাতে যে পরিমান অনুদান দেয় , তার থেকে অনেক অনেক বেশি অনুদান দিতে হয় সামান্য একটা বিধায়ক বা তার পরিবারকে পুষতে গিয়ে ?
একজন ডাক্তার বা গবেষকের আয় থেকে তাদের আয়কর দিতে হয় আর একজন নেতা বা মন্ত্রীর পারিশ্রমিক আয়করহীন। দ্বিতীয় বেক্তি যদি দেশসেবক হন , তাহলে প্রথমজন কি দেশদ্রোহী ?
বেসরকারীকরনের স্বপক্ষে অনেকের দ্বিতীয় এবং অতি অবাস্তব একটি যুক্তি হলো , সাধারন মানুষের দেয়া করের টাকায় দেশের কিছুই চলেনা , যদি না শিল্পপতিরা বিনিয়োগ না করেন এবং তার থেকে কর আদায় না হয় ।
প্রথম কথা শিল্পপতিরা আয় করছেন , তাই আয়কর দিচ্ছেন । কোন শিল্পপতি তার বংশের উপাধি ব্যাবহার করার জন্য তো কর দেন না - কারন ঐ উপাধি টা তিনি পেয়েছেন তার বংশের থেকে । কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি যে কর দিচ্ছেন , তার কারন তিনি যে যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছেন , সেই প্রাকৃতিক এবং মানব সম্পদ - এদের কোনটাই তাদের বেক্তিগত বা পারিবারিক সম্পদ নয় । এগুলো সারা দেশ বা জাতির সম্পদ , কিন্তু তিনি বেক্তি হিসাবে ব্যাবহার করছেন বেক্তিগত মুনাফার জন্য -- তাই তিনি কর দিচ্ছেন ।
আর এনারা কর ই দিচ্ছেন - চিত্তরঞ্জন দাসের মতো দান করছেন না আর সুভাস বোসের মতো চাকরী ছেড়ে প্রান দিচ্ছেন না ।
কিন্তু এইসব শিল্পপতিরা কি অনুদান নিচ্ছেন না সরকার থেকে ? সরকার কার টাকার থেকে এই অনুদান দিলেন ?
২০০ টাকা নিয়ে পালালে সে চোর কিন্তু ২০০০ কোটি নিয়ে পালাতে পারলে , তিনি শিল্পপতি !
কিছু মানুষ সরকারের দেওয়া দু- টাকা কিলো চালেই শুধু অনুদান দেখলেন , কিন্তু ধূর্ত শিল্পপতিদের অনাদায়ী লোনের কথা ভুলেই গেলেন ।
বেসরকারীকরনের স্বপক্ষে থাকা অনেকের তৃতীয় এবং অত্যন্ত অবান্তর চিন্তা তাদের জীবনযাত্রার মধ্যেই লুকিয়ে আছে । এনারা চান সবকিছুই বেসরকারী হোক আরো ভালো পরিষেবা দিতে । কারন এনারা সরকারের ধার ধারেন না । এনারা সবকিছুই নিজের টাকা দিয়েই ভোগ করেন । এনারা ভাবেন যে জীবনে এনারা কোন অনুদান নেননি ।
এনারা ভেবেই নিয়েছেন যে , যেহেতু এনাদের সন্তান দামী বিদেশী গাড়িতে করে নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তে যায় , মুখের সামান্য ব্রন হলেও এনারা যেহেতু ঝাঁ চকচকে নার্সিং হোমে ডাক্তার দেখান , অথবা এনাদের রেশনের লাইনে দাঁড়াতে হয়না - তাই সবকিছুই এনারা নিজের টাকায় ভোগ করছেন ।
এনারা ভাবার দরকার মনে করেন না যে , " সরকারের শিক্ষ্যাখাতের অনুদান কিন্তু বেসরকারি স্কুলেও আসে " । মানে তাদের সন্তান কেবলমাত্র তাদের টাকায় নয় , বরং সারা দেশের মানুষের করের টাকাতেও পড়ছে । ছেলে মেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে দু -চারটে ইংলিশ বললেই যদি ভাবেন সব আপনার নিজের টাকার জোরে হয়েছে , সেটা ভুল । খোঁজ নিন - আপনার সন্তানের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কতো টাকা অনুদান এসেছে ?
এই অনুদানের টাকা কোথা থেকে আসে জানেন ?
সবথেকে বেশি আসে দেশী মদ , বেআইনি হোটেলের বেশ্যার ব্যাবসা , আর অবৈধ নির্মাণ থেকে ।
খালি চোখে যাকে এনারা নার্সিং হোম দেখছেন - সেটা আসলে সরকারী অনুদানে চলা ," মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার " ।
তাহলে এবার কোন ক্ষেত্রটা বাকি থাকলো যেখানে সরকারী অনুদান নেই বা সম্পূর্ণ বেসরকারী উদ্যোগ আছে ?
অনেকে বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর উদাহরন দেন ।
গত কয়েক শতাব্দীতে ইউরোপ আমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি শিল্পপতি দেখেছে - আর তাদের তিক্ত ইতিহাস থেকে তারা শিখেছে , " বেসরকারীকরন হলেও রাস্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রন না থাকলে , ইতিহাস আবার মধ্যযুগের অন্ধকারে ফিরে যাবে । ইউরোপের বেশীরভাগ দেশেই নাগরিক ক্ষেত্রগুলোতে সরকার বা বেসরকারী সংস্থার উপর রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রন দেখা যায় " ।
জনগনের করের টাকায় যদি ফালতু অনুদান হিসাবে খরচ কমাতেই হয় , টাকার বিনিময়েই যদি সবকিছু বেসরকারী সংস্থা থেকেই পেতে হয় --- তাহলে আপনি কেনো আপনার করের টাকায় অযোগ্য , অশিক্ষিত আর অসভ্য সরকারী নেতা মন্ত্রী নেবেন ?
এইসব নেতামন্ত্রী দের অকারনে অনুদানের টাকায় ভরণপোষণ না দিয়ে একটা লাভজনক বেসরকারি সরকার বানালেই তো হয় । টাকাই যদি দিতে হয় , তো যোগ্য বেক্তিকে দেওয়াই ভালো।
আমাদের মন্ত্রীসভা কেন এমন হবেনা ?
প্রধানমন্ত্রী - রতন টাটা ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী - আজিম প্রেমজী ।
অর্থ মন্ত্রী- মূকেশ আম্বানি এবং অভিজিত বন্দোপাদ্ধ্যায়।
ক্রীড়ামন্ত্রী- সচিন তেন্ডুলকর ।
শিক্ষ্যামন্ত্রী - এপিজে কালাম , অমর্ত্য সেন , ঝুম্পা লাহিড়ী ।
তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী- এ -আর- রহমান , জাকির হুসেন , ।
যুব কল্যান মন্ত্রী - রাহুল দ্রাবিড়।
নারী সুরক্ষ্যা এবং কল্যানমন্ত্রী - মেরি কম , ঝুলন গোস্বামী এবং সানিয়া মীর্জা ।
এবং আরো বিভিন্ন দপ্তরের জন্য এমন আরো অনেক যোগ্য এবং প্রতিভাবান বেক্তি ।
তাহলে আপনি কি ভাবলেন যে , দেশ বিক্রী হয়ে গেলো বা সরকার নামের কিছুই আর থাকলো না ?
একদমই না।
শুধু বেসরকারিকরণের মাত্রা সামান্য বাড়ানোর কথা বলছি অসামান্য ফলের আশায় ।
THANKS .
S.V.O
CLICK ON- দান
0 Comments