PEN- PROLAY.
INK- ANANYA.
S.V.O
একটা ছোট সাজানো ছিমছাম ঘরে সাহিনার কোলে মাথা রেখে আমি চুপ হয়ে চোখ বুজে শুয়ে । জগতের চিন্তাহীন এক পুরুষ । সময় এখন অগণন । সাহিনা আমার কপালের উপর ঝুঁকে রয়েছে আর তার ফর্সা , নরম , সরু আঙুল আমার মাথার চুলের ভিতর খেলছে অবাধে । মন এখন ভীষণ রকম শান্ত । অতীতের হতাশা , আগামীর চিন্তার কালস্রোত কখন কিভাবে কোথায় চলে গেছে , আমি জানিনা । আমার শরীর আর মন জুড়ে নেমে আসছে অগাধ শান্তির স্রোত ।
অপ্সরা বললে আমার মনে হয় , সাহিনাকে অপমান করা হবে । পাহাড়ের বরফে সূর্যের আলো পড়লে যে আলোকচ্ছটা ঠিকরে আসে , মানুষের চোখে অন্ধকার নেমে আসে - সাহিনা তেমনই ফর্সা আর উজ্জ্বল । তার তীক্ষ্ণ নাক আর নরম ঠোঁটে যেন কোন শিল্পীর অন্তিম প্রেমের স্পর্শ লেগে আছে । আমি আমার দু চোখ বুজে নিজেকে দেখছি এই পৃথিবীর সুন্দরতম নারীর কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে । সাহিনার প্রেমে একটু শান্তি পেতে । এখানে মৃত্যু এলেও মরা যায়না । জেগে থাকে আমার ভিতরের আমির পিপাসা আর সাহিনার অগাধ রুপ ।
শেষ বারের মতো শান্তি পাওয়ার আগে আমার কপালে নেমে এলো এক গভীর উত্তাপ । সাহিনার সাদা নরম ঠোঁট আমার কপালে । তার ভিতরের জমে থাকা তপ্ত গলিত লাভা ঠোঁট থেকে নেমে আসে আমার কপালে । কবে কোন বিধাতা আমার কপালে কি লিখেছিলো - সেসব ধুয়ে মুছে যায় সাহিনার স্পর্শে । আমি তার হাত ধরে চোখ খুললাম । আমি সাহিনার চোখে চোখ রেখে দেখলাম সমুদ্রেরে চাইতেও অনেক গভীর তার দুই চোখে জ্বলছে গভীরতম প্রেমের নিভে আসা আগুন ।
কিছুদূরে ইচ্ছামতী বয়ে চলেছে তার ইচ্ছামতো । নদী এখানে বিস্তৃত কিন্তু উদার নয় । ইচ্ছা থাকলেও এখানে ইচ্ছামতীর ওপাড় দেখা যায়না - শুধু আন্দাজ করতে হয় । যে নদী ভালোবাসে সে এখানে এসে ঝাঁপ দিতে চাইবেই । কিন্তু ভয় বড়ো বাঁধা । তাই সকলে পারেনা ।
সাহিনা আমার ভিতর কি দেখেছিলো তা আমি জানিনা - কিন্তু আমি সাহিনার আয়নায় নিজেকে দেখেছিলাম । এই গভীর সুন্দর নারীর জন্যই আমার জন্ম । জগতের সকল সৌন্দর্য যখন একটি স্থানে এসে জমা হয় - তখনই হয়তো সাহিনার জন্ম । সাহিনা আমার জীবনের অমলিন সত্য । আমার জীবনের অনেক চাওয়া পাওয়ার যোগফল হলো সাহিনা ।
আমার শান্তিতে শুয়ে থাকা তার সহ্য হলোনা । আমার বুকে হালকা একটা কিল মেরে জানতে চায় , " তোমার মরার ভয় নেই "?
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি , " তুমি পাশে থাকলে নেই " ।
" আমার পাশে থেকে মরতে ভয় পাওনা নাকি মরন এলেই আমাকে চাও " ?
আমি বললাম দুটোই ।
এতোটাই নিশ্চিত নাকি সময়ের পাগলামি ?
যদি বলি দুটোই - তাহলে ?
সাহিনা মৃদু হেসে বলে , ' বুঝেছি - তুমি সত্যি কিন্তু ক্ষনিকের " ।
আমি প্রতিবাদ করি , " সাহিনা , পাহাড় সুন্দর বলেই মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে যায় , সমুদ্র সুন্দর বলেই মানুষ ভেসে যেতে চায় - তুমি সুন্দর - তাই তোমার সাথে মরলে , হয়তো মৃত্যুও সুন্দর হবে " ।
"আর কাল যদি আমি আগুনে পুড়ে যাই - বা অন্য কোন কারনে আর সুন্দর না থাকি , তাহলে কি হবে ? "
এই ' তাহলের ' উত্তর আমার কাছে না তখন ছিলো আর না এখন আছে ।
সাহিনা আমার হাত ধরে বলেছিলো , " তুমি বাড়ী ফিরে যাও " ।
ফিরতে মন চায়নি - সাহিনাকে ছেড়ে যেতে হবে ? আমার জীবনের এক অমলিন সত্যিকে ঢেকে রাখতে হবে মিথ্যার আড়ালে ?
আমি সাহিনার হাত ধরলাম ।
সাহিনা আমার চোখে চোখ রেখে বলে , " তুমি ফিরে যাও " ।
ধরো যদি না যাই ? যদি বলি বাড়ী ঘর সব ফেলে এসেছি ? যদি বলি , " তুমিই আমার পরিনতি " ?
স্মিত হেসে সাহিনা বলেছিলো ," তুমি একাটা গাধা- পরিনতি আর নিয়তিকে এক করতে নেই "।
আমি এক্ সময় ফিরে আসি ।
একাই ।
আসতে আসতে মনে হয় যে , সাহিনাকে ফিরে পাওয়া তো দূরের কথা , তাকে খুঁজে বেড়ানোর সূত্রও আমার কাছে আর নেই । আমি হয়তো এখনো আমিত্ত্বে আটকে আছি - তাই ঘরছাড়াদের মাঝে যেতে পারি , কিন্তু ঘর ছেড়ে বেরোনোর ক্ষমতা আমার হয়নি।
কারন আমি জানি , আমার এই সমাজের ভয়ে কোন বেশ্যা তার নিজের নামটাও সঠিক বলেনা ।
S.V.O
পড়ুন আরো একটি গল্প- ছাপ
https://prolaysankardeysvo.blogspot.com/2021/09/destiny-is-neverland-or-neverland-is_21.html
0 Comments