তিস্তার চিঠি

DESTINY IS NEVERLAND OR NEVERLAND IS DESTINY.
PEN- PROLAY.
INK- ANANYA.
CON= +91-9732803838 .

প্রিয়
      তিস্তা  ,
              এই চিঠিটা আপনি যখন পড়ছেন , নিশ্চীত আমার ভালোবাসা না হোক , কিছুটা ভালোলাগা আমার তরফ থেকে বরাদ্দ আপনার জন্য আছেই  , আর সেই ভালোলাগা টা আপনার অধিকার , কারন আপনি আমার থেকে সেটা অর্জন করেছেন । আপনি আমার পরিচিত কেউ নন । দূর থেকে সামান্য কয়েকদিনের পরিচয়  ।   খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা স্বাভাবিক পরিচয় । কিন্তু সেই পরিচয়ের ভিতর দিয়ে একটা অবস্থা এসেছে যে , আমি বা আপনি একে অপরকে নিজের কিছু কথা বলি । এই কথা শোনার জায়গাটা আপনি অর্জন করেছেন । এটা তাই আপনার অধিকার । একজন নারী  বা পুরুষ যেই হোক - একজন মানুষ হিসাবে তার প্রাপ্য অধিকার ছাড়বে না - এটা আমার বিশ্বাস ।

তাই শুরতেই আপনাকে বললাম না , যে তিস্তা আপনি আমার ভালোলাগা নেবেন - কারন যেখানে স্বার্থ নেই , অথচ ভালোলাগা আছে - তার মুল্য অনেক - যে তার মুল্য বোঝে সে বাকী অনেক কিছুকে মুল্যহীন করে সেই ভালোলাগা টাকেই রত্নমুল্যে বুকেই রাখে ।
ভেবেছিলাম আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা বা গল্প কিছু লিখবো ।কিন্তু সেই চিন্তা ত্যাগ করলাম । কারন গল্পের বাস্তব তো দূর , কোন কাল্পনিক পরিনতিও আমার জানা নেই । আর তাছাড়া হতে পারে এটাই আমার শেষ লেখা । আগামীর কথা জানিনা । তবে আবার যদি সুযোগ পাই ,  হয়তো বাংলায় আর কিছু লিখবো না - কারন আমি লেখার জন্য যতো প্রশংসা পেয়েছি , বেশী টাই ইউরোপ বা অন্য দেশ থেকে । টাকা না পাই - প্রশংসা তো পাই ওদের থেকে ।
আর কবিতা ?
নিজেকে যতোটা পারছি , আজকাল ও জিনিস থেকে দূরে রাখছি । কারন ,
        " আমার কবিতায় তো মিলে যায় গেঁয়ো ছন্দ ,
           আর সেটা আধুনিকতার জন্য নাকি মন্দ  " ।
তাছাড়া অনেকেই বলে আমার কবিতায় শুধু প্রেম আর ন্যাকামিতে ভরা । অনেকে আবার বলে যাই লেখেন , সেই তো এক অনন্যা - আমি বলি , বাপু তাতে তোমার কি ?
তোমার যদি বউ থাকে , বা পাশের বাড়ীর বৌদিকে ভালো লাগে অথবা কোন উঠটি সুন্দরীর কোমল শরীর ও ভালো লাগে , তুমিও না হয় তাকে নিয়েই লেখো , বা গান করো বা একটা ছবি এঁকো ।

আমার বিতর্কিত জীবনে এখন আর অবাঞ্ছিতের সাথে অপ্রাসঙ্গিক তর্ক ভালো লাগেনা - কারন যুক্তিহীন তর্কের গাছ হয় , কিন্তু তাতে ফল বা ফুল - কিস্যুই হয়না ।  তাই কবিতা , গল্প-  এইসব ভাবনা রেখে ,  বসলাম আপনাকে একটি চিঠি লিখতে যাতে , যাই হোক সেটা যেন নিজেদের ভিতরে থাকে । এখানে এখন  অবাঞ্ছিতের প্রবেশ নিষেধ । কারন আমাদের সময় অনেক নয় - তার মধ্যেই খুঁজে নিতে হবে জীবনের আশ্রয় ।

সত্যি কথা বলতে আপনি আমার জটিল , অশান্ত , যাযাবর জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছেন - তার কারন আমাদের ভিতরে থাকা একটা মৌলিক সমতার বোধ ।
আপনি বিবাহিতা ,  সংসারী , ধর্ম মেনে চলা এক সাধারন ভদ্রমহিলা , একজন মা -  আর আমি সমাজের কাছে অবিবাহিত , কিন্তু নিজের মনের কাছে বিবাহিত ,  সংসার করি প্রেমিকার  স্মৃতি নিয়ে  ,  আমার ধর্ম ই হলো ধর্মকে না মানা -   আমি ছোটলোক । আমি মাতাল , আমি লম্পট  , কিন্তু আমি প্রতারক নই ।  ভদ্রতার মুখোশ আমি ঘৃণা করি । পিতামাতা আমার কাছে দেবতার সমান নয় - বরং আমি ভাবি পিতা মানে পুরুষ আর মাতা মানে নারী। পিতামাতার মানে একজন পুরুষ আর একজন নারীর শারীরিক এবং মানষিক কামনার যোগফল । আর আমি তাদের মজার ফসল মাত্র ।
এই অন্ধ সমাজের হিসাবে আমাদের মধ্যে খাপ খায়না ।
আমার আর আপনার চিন্তার কোন মিল নেই - বিশ্বাসের মিল নেই , প্রকাশের মিল নেই , এমনকি কোন মিল নেই জীবনের চাহিদাতেও ।
আপনি চান বন্ধন , আর আমি চাই মুক্তি - আপনি চান ঘর আর আমি থাকি ঘরহারাদের দলে ।
কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ হয়েছে - তার কারন আমরা কেউ কারো থেকে কিছুই আশা করিনা । আমরা দুজনেই আশাহীন একে অপরের কাছে - কিন্তু নিজের কাছে আমরা আবার পুরো নিরাশও নই । তাই হয়তো আমাদের মেলে ভালো - কিন্তু রঙের মতো আবার মিলেমিশে গুলেও যায়না - কারন আমাদের আলাদা অস্ত্বিত্বের ব্যাপারে আমরা সচেতন ।
আমরা দুজনেই জানি যে আমাদের অবস্থা কিছুটা এক - কিন্তু আমরা এক নই । তাই সাধারন ভারতীয় সমাজে যা হয়তো অবাস্তব , সেটা আমাদের  কাছে এখনো পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই সম্ভব হয়েছে - সেটা হলো একটা আন্তরিকতা । একজন পুরুষ আর আরেকজন নারীর দেনা-পাওনা বিহীন যোগাযোগ ।
আমরা কেউ কাউকে ভালোবাসিনা - কিন্তু একে অপরের ভালো চাই - এই চাওয়া সত্য । এই চাওয়া সুন্দর । এই চাওয়ার মধ্যে কারো কোন বেক্তি স্বার্থ নেই -

আমি নিজে তিস্তার দুটি রূপ দেখেছি - প্রবলভাবে ধাবমান বহতা তিস্তা - সে ভয়ংকর - কালের নিয়মে সে নিজের স্রোতের জল আর মানুষের চোখের জল - সমান ভাবে বয়ে নিয়ে চলেছে । সে তিস্তা নিয়মহীনা , নিষ্ঠুর । সেও এক নারী - কিন্তু সে ভয়ংকর ।

আর এক তিস্তা আপনি - গভীর সমুদ্রের মতো স্থির , শান্ত  । আপনার এই শান্ত , স্নিগ্ধতা আমাকে ভীত করে । কারন আমি জানি গভীর আর শান্ত সমুদ্রই প্রবল ঝড়ের জন্ম দেয় । আপনি চান সংসার , সন্তানের ভালো আর স্বামীর সংগ । আপনার ভিতরের না পাওয়ার যন্ত্রনা আমি বুঝি - কিন্তু অনুভব করতে পারিনা - কারন এই অনুভুতির সাথে আমি পরিচিত নই । কিন্তু আপনার এই সবকিছুর সাথে মানিয়ে চলা আমি মেনে নিতে পারিনা - কারন আমি জানি মানুষের মেনে নেওয়া সাময়িক - একদিন তার প্রকাশ হয় - আর সেই বহিঃপ্রকাশ হয় ভয়ঙ্কর । আমি তাই চাই আপনি আপনার অসুবিধার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান - তাতে যুদ্ধ হলে হোক - কিন্ত দুর্বল আর সবলের কোন্ দিন মিল হয়না - যা হয় তার নাম দাসত্ব - আপনি দাসী নন - এই সহজ কথাটা আপনি যেদিন আপনি নিজে বুঝবেন , সেদিন আর আপনার আমার মতো কাউকে দরকার হবেনা ।

ভালো লাগে আপনার  চিন্তাধারাকে ।

আপনি জানেন যে আমি তীব্র নেশাগ্রস্ত । উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই আমি মাতাল । আমার জীবনে নারী সংগের অভাব কখনো হয়নি ।  সুন্দরী প্রেমিকারা নিজের ইচ্ছায় এসেছে , গেছে । কাউকেই আটকে রাখিনি  । তারা প্রত্যেকেই সুন্দর -তারা সকলেই আমায় ভালোবেসেছে , আমায় কিছু শান্তি দিয়েছে । তারপর ?
তার আর পর নেই - কারন তাদের পরবর্তী জীবনে আমি আর প্রবেশ করিনা - তারা থাকুক তাদের মতো । যদি আবার কখনো কারো মনে পরে এই প্রলয় শংকর দে -কে  , তবে আমি তাদের পাশেও থাকবো । কিন্তু আজ এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমার মনে শুধুই অনন্যা । কারন সেই আমাকে সবথেকে ভালো বুঝেছে ।
কিন্তু এই আমিই শেষ আমি নয় । আমার মধ্যে আছে আরো অনেক আমি ।

  জীবনের কতো রাত যে বেশ্যার সাথে কাটিয়েছি , সে নিজেই গুনিনি ।
 সোনাগাছির হোটেলের ছাঁদে বেশ্যার  সাথে রাতের আকাশের চাঁদ দেখেছি , তার কোলে মাথা রেখে সিগারেটে টান মেরে তার জীবনের কথা শুনেছি  , মনে হয়েছে হয়তো বা আমিও দায়ী এই মেয়েটির বেশ্যা হওয়ার জন্য ।  আমার দিনের আর রাতের আমি একই - আসলে  সব শেষে আমিও এক মুখোশ পরা  বেশ্যা ।

আমি জানি কে আমার স্ত্রী ,  কে আমার বান্ধবী আর কে আমার মনের ভিতরে থাকা কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া প্রেমিকা । আমার স্ত্রীর সেভাবে আমাকে দরকার পড়েনি যেমন আমারো দরকার হয়নি তাকে ।
এই সমাজের এই সিঁদুর পরা বিয়েতে আমি জীবনে বিশ্বাস করিনা । কিন্তু সামান্য সিঁদুর পরালেই যদি কেউ যদি কারো স্বামী হয়ে যায় - তবে আমি বিবাহিত । কারন কোন এক প্রেমিকার শখ মেটাতে গিয়ে তাকে আমি সিঁদুর দিয়েছিলাম । তাতে আমার এক টাকাও খরচ হয়নি - কারন সিঁদুরের শখ ছিলো তার , আর তার শখ মেটানোর ক্ষমতা তার নিজের ছিলো । ফিজিক্সের স্টুডেন্ট সে । অত্যন্ত মেধাবী । পদার্থবিদ্যা নিয়ে যার কাজ , আমার মতো অপদার্থ নিয়ে তার চলেনা । তার সব কথা আমার মনে হতো গণিতের সূত্র আর আমার কথা তার কাছে মনে হতো অবাস্তব । স্বাভাবিকভাবেই আমরা একে অপরকে ত্যাগ করলাম ।
আমার বান্ধবীরা  ?  তারা তো  সকলেই প্রায় রজণীগন্ধ্যা ।
আর প্রেমিকা ?
সে আমার ৩২ বছরের জীবনটাকেই বদলে দিয়ে গেলো । কতদিন হোয়ে গেলো , তাকে আমি দেখিনি , তার কোন কথাও শুনিনি - তবু এমন একটা সময় নেই -  যখন তাকে ভুলতে পেরেছি । কারন সে যে  অনন্যা ।
আপনার সাথে আমার দেয়া নেওয়ার সম্পর্ক নয় - তাই আপনি জানেন প্রলয় শংকর দে মদ ছাড়তে পারে , মেয়ে মানুষের সংগ ছাড়তে পারে , কোন নেশা আর তাকে স্পর্শ করেনা  - কারন তার পা থেকে মাথা অবধি আজ অনন্যার নেশায় জড়িয়ে আছে ।
আপনাকে আমার ভালোলাগে - কারন আপনি বোঝেন আমার কাছে অনন্যার মুল্য কতোটা ।
আপনার এই উদারতা আমার ভালোলাগে । মাঝে মাঝে মনে হয় তিস্তা উদার বলেই হয়তো এত গতিশীলা ।
আর এই ভালোলাগার থেকেই বলতে পারি , আপনার জীবন একদিন নিশ্চয়ই ভালো হয়ে উঠবেই । আজকের আপনি আর আগামীর আপনি আলাদা হবেন । আপনার ভিতরে আছে আরেক নতুন আপনি -   শুধু আপনাকে লড়তে হবে - আর কারো সাথে নয় - এই লড়াই আপনার সাথে আপনার নিজের লড়াই ।
আপনি নানাভাবে নিজেকে দাড় করানোর চেষ্টা করছেন - আমি নিজেও জানি কাজটা আসলে খুব কঠিন এই সময়ে । কিন্তু এটাই একমাত্র পথ । আপনি মরার কথা বলেন , তাতে আমার ভয় লাগে ।
কারন আপনি মরবেন - আপনি বেঁচে গেলেন । কিন্তু তাতে আরো একটা প্রলয় শংকর দে  জন্ম নেবে ।
সেটা আপনার সন্তানের জন্য অভিশাপ হবে । আপনাকে তাই আপনার মতো বাঁচতেই হবে । 
একটা কথা আপনাকে বলি - অনন্যাও একদিন আমায় বলেছিলো যে , সে আমার সাথে মরতে চায় - আমি হয়তো ভিতরে ভেবেছিলাম , সেটাই ভালো - কিন্তু নিমেষের মধ্যে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম - কারন আমি তাকে ভালোবাসি - তার সন্তানকে আমি অনাথ করতে পারিনা ।

 একজন বন্ধু হিসাবে বলি , আপনি একদিন  জিতে যাবেন - হয়তো সেদিন আপনার সাথে আর আমার যোগাযোগ থাকবে না । দরকারও হবেনা । শুধু একটাই অনুরোধ ,  সেই দিনটার জন্য নিজেকে গড়ে তুলুন ।
                                                                                 
                                                                                            ইতি
                                                                      আপনার একজন সাধারন বন্ধু
                                                                                  প্রলয় শংকর দে

THANKS.
S.V.O
























Post a Comment

0 Comments