রোসেন্দা






 রোসেন্দা ।  এই শহরের জানা অজানা নানা পথ ধরে হাটি  আমি । এটা অভ্যেস বা শখ - দুটোই হতে পারে । কখনো প্রবল গরমের কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় মেখে হাটি - একদমই নিজের মতো করে।  ক্লান্ত হই ,  পছন্দমতো জায়গা খুঁজে নিজের মতো করে খানিকটা  বসে  নিই । সেটা হতে পারে কোন দামী কফি-শপ অথবা হতেই পারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা , হাজার একটা মানুষের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা নোংরা , বিষাক্ত কাদার মতো - গালাগালি আর লাথি খেয়েও সামান্য কিছু পয়সা আয় করে , তাদের বস্তিতে । আদর আপ্যায়নের ধরন মোটা্মুটি একই রকম। কোথাও টাকার বিনিময়ে আর কোথাও বা আন্তরিক ভাবে। বাইরের চাকচিক্যে অনেকটাই হারিয়ে যায় , মনের ভিতর কি ভাবনা চলছে- কিন্তু সকল প্রানীর চোখের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সেই ভাষা পড়তে পারলে , অনেকটাই বোঝা  যায়  যে  ,
কে , কাকে , কখন আর কিভাবে ব্যাবহার করছে  ।

অনেক আগে এটা খুব ভালো বুঝতাম না - এখন দারুন  বুঝি , ব্যাপারটা ঠিক তাও নয় ।
 তবে সামান্য হলেও কিছুটা অনুভব করতে  শিখেছি । তার জন্য বহু পথ হেঁটেছি - শুধু আমি একাই হেঁটেছি  ? না । আরো অনেকেই সংগ দিয়েছেন ।  তারা নিজেদের মতোই  এসেছেন-গিয়েছে্ন।  সকলেই প্রায় অচেনা । তারা কোথা থেকে এসেছেন আর গেছেনই  বা কোথায় , সেভাবে কারো খবর রাখিনি। নিজের মতো করে নিজেই হেঁটেছি । রাজপথ থেকে নোংরা গলিপথ অথবা সেখান থেকেই সোজা  নগরের একেবারে প্রান্তে । অনেক প্রান্তিক মানুষের ভীড় সেখানে । তারা  আগে হয়তো অন্য কোথাও থাকতো আর আগামীকালও হয়তো বা অন্য আবার  কোথাও থাকবে। কিন্তু কোথায় বা  কিভাবে থাকবে ,  কারো তা  জানা নেই। হয়তো   ভিড় করে আছে আবার কোন এক ভিড়ে মেশার  সুযোগের জন্য ।

একদিন মনে হলো  আমাদের  রোজকারের  ভাষায় যদি মহানগর গুলিকে মহানতর নগর বা মহানতম নগর বলা যেত  , তাহলে এই শহরকে অনেকেই হয়তো মহানতম নগরই বলতো। কারন অনেকেরই যা থাকেনা এই শহরের ঠিক তাই আছে -সেটা হলো এর একটা নিজস্ব মাপকাঠি , যেটা কিনা  প্রতি ধাপে -বেশ একদম মাপে মাপে বুঝিয়ে দেবে ঠিক কোন বেক্তি বা বস্তুটা অন্যের চাইতে কতোটা , কেন আর কোথায় মহান , অথবা যে কিছুই জানেনা , তার জন্যও শিখে নেওয়ার পথ আছে , ঠিক কিভাবে নিজের ভিতরেই  নিজেকে নিজেই মেপে নিতে হয় অন্যের দেওয়া মাপকাঠিতে।
উদাহরন হিসাবে আমি প্রথমেই আমার কথা বলি ।
নাম - রোসেন্দা ।
উপাধি - নেই।
জাত - জানা নেই । 
সামান্য একটা নাম -কিন্তু কাউকে কাউকে  চিন্তায় ফেলার জন্য যথেষ্ট ।  এ  পুরুষ নাকি মহিলা ?  দেশি নাকি বিদেশী ?  জাত কি ? ধর্ম কি ? একা একা শহরের পথে ঘুরে বেড়ায়- উদ্দেশ্যই বা কি   ?
কিন্তু আসলে নিতান্তই  সাধারন মামুলি একটা  ব্যাপার ।
 এই সব প্রশ্ন একেবারে ফেলে দেওয়ার মতোও তো নয় -  বিশেষ করে সেই সব লোকের কাছে চোখে দেখে , কানে শুনে , পাশে থেকেও সারাজীবনে একটা রক্ত মাংসের মানুষকেই চিনতে পারেনা , অথচ সমাজের সবজান্তা পদবীটাও চাই । 
ঠিক এই শহরের বুকেই এক নিছক বাঙালী পরিবারে জন্মানো এক অতি সাধারন যুবক । আঠারো পেরিয়ে যখন কুড়ি অথবা একুশ মতো হবে , কি করে যেন মাথায় খেলে গেলো বাবা-মা তাদের সন্তানকে যে নামটা দেয় , সেটা তো শিশু বয়সের জন্য। কিন্তু নিজের চিন্তার একটা চলনসই কাঠামো হয়ে গেলে , আইনের খাতায় সাবালক হলে -  নিজের সুবিধামতো একটা নাম দিয়েই নিজের পরিচয় হওয়া বেশ দরকার। বাপ মায়ের দেওয়া নাম , পদবী আর খেলনা সবই সাময়িক - নিজের সুবিধামতো আর সব অভ্যাসের সাথে ওগুলোও ছাড়া উচিত। 

একদিকে আকাশছোঁয়া বিলাসবহুল আবাসন আর ঠিক তার পেছনেই নোংরা ঘিঞ্জি বস্তির নোংরামি । একদিকে নীলাভ কফি শপ - সুন্দরী নারীর হাতের   এককাপ কফির দাম  হাজার টাকা ,  আবার তার ঠিক সামনের দিকেই শুয়োরের পালের মতই অনাকাঙ্ক্ষিত  আর অবাঞ্ছিত  হাজার বাচ্চার দল - দাঁড়িয়ে আছে আপনি বা আপনার মত কেউ যদি কখনো একটা এক টাকারও কয়েন ওদের দিকে ছুঁড়ে দেন ।

অর্থাৎ বাইরে থেকে আমি  এলে শুধুই যে একসাথে দুই ভিন্ন  জীবন দেখছি  - তাই ই নয় , চাইলে মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেকেও বিচার করে নিতে পারছি  ঠিক  কোথায় , কার থেকে , কতোটা  এবং কেন পিছিয়ে বা এগিয়ে আছি । কে , কাকে , কখন আর কিভাবে   নিজে কোন শ্রেনীতে নিজেকে রাখবে  - হতাশ না সুখী  , সফল নাকি বিকল - এসব নিয়ে কেউ মাথাই  ঘামাবে না -  এসব  আমার , আপনার , সকলের একান্ত বেক্তিগত স্বাধীনতা ।
 মাঝে মাঝেই মনে হয়  এ শহরে যাদেরই  শরীরে মগজ  নামের কিছু  একটা  আছে , তারা কখনোই এখানে  ঘামেনা আর যাদের ঘাম হয় , তাদের মাথা বা মগজ হয়তো কিছুই কাজ করেনা । বুদ্ধিমান লোকেরা  তাই এখানে রাজপথের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ভারসাম্য রাখে । 

প্রচন্ড  গরমের দুপুর- শহরের রাজপথের ঠিক মাঝপথ দিয়ে একটা অত্যন্ত দামী , শৌখিন , বিদেশী ভিনজাতের গাড়ি চলছিলো তার নিজের ঠিকানায় - গাড়িটা আসলেই  ভিন জাতের - কারন এর ভিতর বসে থাকা ৩৪ কি ৩৬ বছরের  সুনেত্রা  নামের ভদ্রমহিলা নিজেই জানেন না ,  যে তিনি যে কোম্পানিতে কাজ করেন - তারা কবে কখন কোথায় তার জন্য ঠিক কি কি ব্যাবস্থা করে রাখে - আসলে  তার  নিজের খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান , প্রতিষ্ঠান এসব কোনকিছু  নিয়েই ভাবার মতো বিলাসীতার সময় তার নেই । 
ভাবার জন্য তার কাজ আছে অথবা আরো সহজ কথায় তাকে ভাবতেই হয়, , তার ভাবনার  গুনমান তাকে উন্নততর করতেই হয় ,  সোজা কথায় ভাবতে থাকাই তার কাজ আর  এর পাশে তার নিজের একটা তিন বছরের ছেলে আছে - যার জন্য তাকে কাজ করতেই হয়  আর ভাবতেও হয়।

সুনেত্রা সেন শহরের হাতে গোনা কয়েকটা টিকে থাকা  অভিজাত পরিবারের মেয়ে। ওদের আভিজাত্যটা ঠিক  দামী ইটালীয়ান মার্বেল বা হাল আমলের গাড়িতে আটকে রাখার  মত নয় - বরং চলতি সমাজের ধনীদের সাথে মোটেই  তা মানানসই নয়  ,   ওদের বাড়ির বসার ঘরে এখনো  রবীন্দ্রনাথ  , কাফকা  বা ক্লিওপেট্রা , নেফারতিতি  নিয়েই  কথা হয় । দেওয়াল থেকে পিকাসো , নন্দলাল তাকিয়ে থাকে ।   ধুলো জমেনা  কারো গায়ে ।   আসবাব পত্র এখনো কাঠের ব্যাবহার হয় । পরিবারের বাকী সদস্যদের মতোই সেও কিছু সাধারন মানবিক দোষ গুণ নিয়েই জন্মেছিলো।
তার চেহারা বা রুপের ভিতর খুব যে একটা আগুনের মতো ভাব ছিলো তা নয়। । তবে তার সাদাটে চামড়ার নিচে  বেশ নীলচে রক্ত বয়ে বেড়ানো  শিরা  উপশিরা গুলো দেখা যেত আর টিকালো নাকের ওপর চশমা ফেলে তার ভিতর দিয়ে তাকালে , তার চোখের মণিগুলো যেন নিজেরাই আলাদা করে একটা পরিচয় দিতো।  সে পরিচয় বুঝতে গেলে শুধু দামী মদ আর পোষাককে পূঁজি করলেই চলেনা বরং তিন পুরুষের একটু সহজাত বিদ্যার দরকার পরে ।
 গুনের মধ্যে তার মস্তিস্কটা ছিল এমনি যার কারনে সে স্কুলে কোনদিন দ্বিতীয় হয়নি , আর এই ধারা সে বজায় রেখেছিলো একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি । বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সময় পাওনা বলতে তার মুকুটে কেবল একটা নতুন পালক মাত্র যোগ হলো , " বিষয়ভিত্তিক প্রথম স্থানাধিকারী "- তাতে যে তার পরিবারের  খুব গৌরব বাড়লো  তা নয় - তবে  সে নিজে সরাসরি বেশ নামকরা একটা কোম্পানিতে চাকরি পেলো আর তারই সাথে পেলো তার রক্তে মিশে থাকা জেদ প্রকাশ করার সহজ  পথ ।

প্রথম মাসে বেতনের  টাকা পেয়েই সে পরিবারে জানিয়ে দিলো যে , তার একজন প্রেমিক আছে , যাকে সে খুব শীঘ্র ই বিয়ে করতে চায় -  আরো জানালো বাড়ির লোকেদের মত বা অমত দুটোই   সমান ।  খবরটা যত ভাল হতে পারতো ,  তা যে হবেনা সে ব্যাপারে সে ভালোই নিশ্চিত ছিলো।  তাই সবকিছুর পরিপূরক ব্যাবস্থাও সে আগেই করে রেখেছিলো- কোম্পানি থেকে পাওয়া বিলাসবহুল ঠিকানা ,  চলে ফিরে বেড়ানোর জন্য বিদেশি গাড়ি আর মাসের শেষে মোটা বেতন- তাতে  দুজনের সংসার ,  বিলাসীতা ,  এমন কি নিজের   স্বামীর  লেখাপড়ার খরচের - আর    কিছু  টাকার স্বাধীনতাও থাকলো।
সে তার নিজের ভাইয়ের বন্ধু  নীলাভ যেভাবে যত্ন করে ভাইফোঁটা দিত , তেমনি  আদর যত্নে  আইন মেনেই তাকে  নিজের স্বামী বানালো । 
 পরিবার ছাড়লো  এবং নিজের বানানো নিজের ঠিকানায় এসে উঠলো নিজের মতো করেই । সুনেত্রার  র কাজ ছিলো  creation  , সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিত্য নতুন সৃষ্টি করা বা কোন নিয়ম মাফিক হয়ে আসা সৃষ্টির চেনা ধাঁচ , বাধা ছাঁচ টা ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে কোন নতুনের ছোঁয়া লাগানো । ফলে আর দশটা অসাধারন বেতন ধারীর মতো তার জীবন টা সাধারন চাকরী করা চাকরদের  দের মতো হতে পারলো না ।  সে অনেক সময় পেলো ঘুড়ে আর উড়ে বেড়ানোর। কিন্ত সে সময়টা কাজে লাগালো তার চেয়ে সাত বছরের ছোট স্বামীর প্রতিভাকে ঘসে মেজে পালিশ করতে। একদিকে নীলাভ যেমন সুনেত্রার  ছোঁয়ায় অসামান্য ধাতু থেকে অসামান্যতম অলংকারে রুপ নিলো , তেমনি নীলাভর ছোঁয়ায় সুনেত্রা  নতুন রুপ পেলো। তার creative instinct এ একেবারে নতুন একটা পালক লাগলো। সে এখন এখন সুন্দর একটা শিশুর  মা ।
ইতিমধ্যে নীলাভ প্রতিষ্ঠিত । সে নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করলো-  হয়তো তার নতুন পরিকাঠামোয় একেবারেই অজান্তে তার চুম্বকের মেরু বদলে গেছে ।  সুনেত্রা  আর তার সুনেত্রে  নয় - সে এখন দূরে চলে যাচ্ছে । কিছুটা   হালকা ধূসর - কাছে টেনে রাখার  শক্তি তার কমছে- অন্য কোন এক অজানা চুম্বকের টানে নীলাভ ক্রমশ দিক বদলাচ্ছে।
নীলাভ চেস্টা করেছিলো ব্যাপারটা আস্তে আস্তে  সুনেত্রা  কে বোঝাবে । কিন্তু মায়ের কাছে মাসীর কথা বলা যেমনি বৃথা  , তেমনি নীলাভর পক্ষ্যে সুনেত্রাকে  কোনকিছু  বোঝানোও তেমনি।
সে নিজের মত করে সবে তার চেস্টা  সামান্য পরিমানে শুরু করেছে। ্‌ এক সময়ে তাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলে গেলো সেই আদালতের দরজায় । সমাজ , পরিবার , পরিচয় - সবকিছুকে একবারে তুচ্ছ্যতম করে এই আদালতের ঘরেই সে নীলাভ , যে কিনা তার নিজের ছোট ভাইয়ের সবথেকে কাছের  বন্ধু, যাকে সে নিজের  মতোই গড়ে তুলেছে - একদিন ভাইয়ের মতো ভালবেসেছে , প্রেমিকার মতো কাছে টেনেছে ,  স্ত্রীর মতো তার সাথে কামনার দেওয়া নেওয়া করেছে -    সে  নীলাভকে দিয়েই অবলীলায় অনায়াসে  মিউচুয়াল ডিভোর্স টা করিয়ে নিলো।

অন্য কেউ হলে কি করতো সে তা জানে - কিন্তু সুনেত্রার  রক্তের জাত একটু আলাদাই ছিলো হয়তো । তাই সে একদিকে যেভাবে নিজের কাগজপত্র বুঝে নিলো , তেমনি নীলাভর হাতে ধরিয়ে দিলো একটা যথেষ্ট দামী গহনা - তার পরের স্ত্রীর জন্য ।
ছেড়ে আসা পুরানো পরিবারের সকলের অজান্তে ছোট ভাই এসেছিলো দিদির খারাপ সময়ে পাশে থাকতে। ভাই পাশে থাকলে তার কোন অসুবিধা  ছিলোনা , কিন্তু যখন বোঝা গেলো ভাই এসেছে সকলের অজান্তে তাকে খুব মোলায়েম সুরে ফিরে যেতে বললো আর যাওয়ার সময় তাকে পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দিলো আত্মহত্যা , পরিকল্পিত খুন বা বধু নির্যাতনের মতো ঘটনায় ডিভোর্স কেন আর কতোটা জরুরী - আর এই সবকিছুর সাথে নিজেরই  ছোট ভাইয়ের বন্ধুকে বিয়ে করা অথবা বাপ মায়ের পছন্দ করা দাদার বন্ধুকে বিয়ে করা - আসলে কোনকিছুই আসল কিছু নয়। যেটা আসল তা হলো সময় ।
এসব বেশ পুরোনো দিনের কথা - সময়ের হিসাবে খুব পুরোনো না হলেও , বিষয়ের গুরুত্বের বিচারে এগুলো নিছকই জাদুঘরের বস্তুও  তো  নয়। আমাদের চোখের আড়ালে বা সামনে এমন কত শত ঘটনা রোজই ঘটে - আমরা দেখেও বুঝিনা বা বুঝেও দেখিনা ।

চলন্ত গাড়িতে বসে সুনেত্রা  ভাবছিলো তার ঠিক এই সময়ের চলমান জীবনের কথা । হাতে ধরা রয়েছে সবেমাত্র আজকেই পাওয়া promotion letter মানে সোজা কথায়  আরো একটু উঁচুতে ওঠার ছাড়পত্র। এটার জন্য কি বড্ড বেশী তাড়াহুড়ো করা হলো ? ছেলেটাকে সেভাবে সময় দেওয়া হয়নি কয়েকমাস - আবার এমনো নয় যে আগামী দিনগুলিতে সে এই ঘাটতি মিটিয়ে দেবে ।

যাই হোক বহুদিন পর সুনেত্রা  ঘরে ফিরে পড়লো নিজের ছেলেটাকে নিয়ে - ঠিক সেভাবেই , যেভাবে কিনা সে চায়- যতরকম মজা মা ছেলে মিলে করা যায় , তার প্রায় কিছুই বাকী থাকলো না।
পরদিন সকালে নতুন সূর্য , নতুন আলো , নতুন স্বপ্ন -   কাজের মেয়েটা ঘর খুলে আবিস্কার করলো তার প্রিয় দিদিভাই সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরে বিছানায় পড়ে আছে। মূখটা ভয়ঙ্কর ভাবে বেঁকে আছে,  দুপাশের গালের পাশ দিয়ে রক্ত জমে আছে, সারা ঘরে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ । হাতের মুঠোয় ধরা একফালি কাগজ , তাতে লেখা "   BEYOND ANY OF YOUR BONDING "।  সুনেত্রার ছেলে একমনে মনোযোগ সহকারে নতুন খেলনাগুলো নিয়ে একমনে খেলছে -  বিষের  খালি শিশিটায় কিছুই নেই । 

এরপর পুলিশের হাতে আসে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট -
নাম- সুনেত্রা  ( ডিভোর্সের পর তিনি আদালতের মাধ্যমে পদবীহীন ছিলেন ) । 
ধর্ম - নেই ।
জাত- নেই ।
অভিভাবক -নেই ।
ঘটনা- আত্মহত্যা।
কারন - অজানা । 
* মৃতার শরীরে তীব্র বিষের অস্ত্বিত্ব পাওয়া গেছে ।*

পুলিশের খাতায় সুনেত্রার মৃত্যুর কারন হিসাবে লেখা ছিলো বিষক্রিয়া কিন্তু বিষক্রিয়ার কারন ?
লেখা ;নেই ।

পুলিশ জানেনি -  আর জানার প্রয়োজনও  মনে করেনি -  শহরের বুকে হাজার হাজার জ্যান্ত লাশের মধ্যে নতুন একটা । সুন্দরী যুবতী , তার ওপর আবার ডিভোর্সি - মেয়েটা বেশ্যা ছিলোনা - একথাই বা কে বলবে ?  এই সব মেয়েদের এটাই  পরিণতি ।  বিষের যন্ত্রণায় বেকে যাওয়া মুখ ঢেকে দিলে - নগ্ন শরীর হিসাবে  দর্শকের প্রাপ্তি খারাপ নয়।
 রাতের কামাগ্নি নিভেছে , রাতজেগে কাজ করে শরীর যখন সবে মদের নেশায়  এলিয়ে যেতে চায় , একটা  আতিপাতি সুইসাইড কেস দেখে ডেডবডি দেখতে  এসে যদি দেখা যায় এক নিখুঁত সুন্দরীর সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ - মনের ক্লান্তি অনেক কেটে যায় ।  হতেই পারে লাশ - কিন্তু শরীরে মাংস তো  আছে , ফর্সা  চামড়া আছে , তার থেকেও বড়ো যুবতীর নগ্ন লাশ দেখে চোখ ভরানোর মত মনও  তো আছে।
অনেক কিছুই সেদিন লাশের পাশে ছিলোনা । সব না থাকা জিনিসগুলি অপ্রয়োজনীয় নয়। যেমন তার ছেলেটা । আরো অনেক কিছু । রোজকারের চলমান জীবনে সকলের কাছে দামী না হতেই পারে । তবে কিছুই একেবারেই তো মিলিয়ে যায়না । এমন অনেক কিছুই আছে । কিছু  আছে এখনো সুনেত্রার লকারে রাখা ডায়রিতে , পরে হাত বদল হয়ে সেসব গিয়েছে তার ছোট ভাইয়ের কাছে , ডায়েরি , কবিতার খাতা , আর তার ছেলেটাও। আসলে  " সুনেত্রার  নিজের কোন ছেলেই ছিলোনা । হাসপাতালে সে এক  শিশুকন্যার  জন্ম দিয়েছিলো। তার অজান্তেই অসীম প্রভাব আর টাকার বলে সেই  শিশুকন্যার  বদলে গিয়ে হয় এক সুন্দর পুত্র সন্তান । কিছুদিন আগে পর্যন্ত এসব সুনেত্রার অজানা ছিলো । কিন্তু নদীর কোন ঘাটের জলে কার কাপড় ভেজে , তা কেউই জানেনা ।
কোন এক সহকর্মীর কাছ থেকে সুনেত্রা কবে কিভাবে সব জেনেছিলো , সে কেবল সেই জানতো। ডায়েরীতে অনেক কিছুই লেখা ছিলোনা।

তবে সবকিছুই সযত্নে রাখা ছিলো তার ভাইয়ের কাছে। ভাগ্নে বড়ো হওয়ার পর মামা হিসাবে তার  সব ইতিহাস , ভূগোল আর বিজ্ঞ্যান সযত্নে তাকে বুঝিয়ে মামা হিসাবে তাকে শিখিয়েছে , তার নিজের মায়ের মতই নিজের পথে চলতে।
রোসেন্দা বহুদিন পরে কোন এক নদীর পাড়ে এসে তার মা - সুনেত্রার ডায়েরি পড়ে শোনালো তার স্ত্রী -  নিশীথা কে। নিশীথা মাঝে মাঝেই এসব শোনে স্বামী রোসেন্দার মুখে------- শুনতে খারাপ লাগেনা নিশীথারও- যে কিনা একদিন জন্মের পরই হারিয়ে গেছিলো তার নাম না জানা মা সুনেত্রার থেকে।

PEN -PROLAY.
INK-ANANYA. 


















Post a Comment

0 Comments