প্যাঁচা দা -২

DESTINY IS NEVERLAND OR NEVERLAND IS DESTINY.
PEN- PROLAY. 
INK- ANANYA. 
S.V.O



আমরা মানুষ সকলেই - তবে ধরনে ভিন্ন, কেউ সাধারন , কেউ অসাধারন আর কেউ বা অতি সাধারনের দলে ।  সাধারনত সাধারনেরা অসাধারন সব কথা বলে আর অসাধারনেরা খুব সাধারন বিষয়ে মাথা গলিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা রীতি নীতিকে পুরো বেমক্কা লাশকাটা ঘরে চালান করে দেয় । 
আমরা অতি সাধারন , তাই বুঝতে পারিনা আমাদের পাতিপুর গ্রামের  প্যাঁচা দা কোন দলে - সাধারন নাকি অসাধারন ? ওনাকে নিয়ে আজ বিকালের চায়ের দোকানে বসে হয়তো আজ এভাবে  ভাবতে হতোনা , যদি না উনি গতকাল  রাতেও রোজকারের মতো আমাদের সাথে এখানে সময় না কাটাতেন । 
                                                      আমরা জানি প্যাঁচা দা এক জীবন্ত বটগাছ। প্রাণবন্ত , কিন্তু অবিচল । ভোরের আলোর সাথে পাখির দল উরে চলে যায় , রেখে যায় বাসা আর ডিম - সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসলে সারা গায়ে অবসন্নতা মেখে বাসায় ফিরে আসে - বটগাছ পাখিদের কাছে কিছুই জানতে চায়না । 
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু আর তর্কে বহুদুর । বটের গায়ে কেউ এসে সিঁদুর মাখিয়ে মঙ্গল কামনা করে , আবার কেউ চায়ের দোকান বানিয়ে ভিতরে গাঁজা বিক্রী করে , কেউ নিজের দরকারে ডাল কেটে নিয়ে যাচ্ছে  আবার কেউ ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয় ।  বটগাছ চুপ করে থাকে । এ জগতে তার কাজ দেওয়া , নেওয়া নয় ।
প্যাঁচা দাও সেই বটগাছটির মতো- বৌদির সায় ছিলো তার এই জীবন যাত্রায় ।  সংসারে এসেও তাই আর বাকী দশজঅনের মতো   তাদের আর সংসার করা হয়নি। 
অন্যের মেয়ের বিয়ে , গ্রামের  নাটক , গ্রামের স্কুল - এই সব নিয়েই দিব্বি কাটিয়ে দিলো । 
গতকাল রাতেও হাসি  মাখা মুখ করেই গেলেন - আজ কোথায় সে হাসি আর কোথাও সে মুখ ?  একদিকে আমরা আর অন্যদিকে প্যাঁচা দা । মাঝখানে সময় । এখন হাজার চাইলেও প্যাঁচাদা কে দেখার পথ নেই । 
জীবন আসলে বেঁচে থাকার  জন্য । বাঁচতে গেলে পরিবর্তনকে মানতে হয় । 
আজ এখন এই সন্ধ্যায় মনে হলো আমরা সেই সব সাধারন মানুষের দলে , যারা সবকিছু নীরবে মেনে নেয় - কিন্তু অনেক কিন্তুর মাঝে আটকে থাকে । 
সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে মানেই - চা , বিড়ি , সিগারেট , ডিম ভাজা - যে যার মতো  খেতে থাকো - বিল দেবেন প্যাঁচাদা । 
গতকাল এরকম সময়ে দুই তিন বার চা হয়ে গেছিলো।  নেপাল ডিম ভালবাসে । কাল সাতখানা খেয়েছিলো। আজ চা আছে , আমরা আছি , নেপাল আছে , ডিম আছে - শুধু নেই খাবার ইচ্ছা আর নেই প্যাঁচা দা । সামনে পড়ে আছে সময় ।
সকলের ভিতরে নেপাল খুব ভেঙ্গে পরেছে । মাঝে মাঝেই মোবাইল বের করে প্যাঁচাদা র ছবি দেখছে । আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম , " ভাই রাখ এসব - এখন কি করা যায় তাই ভাব " । 
আমাদের নিমাই বাড়ীতে বিড়ি সিগারেট কিছুই খায়না । অথচ  প্রতিদিন এখানে বান্ডিল ধরে বিড়ি টেনে স্টিম ইঞ্জিনের মতো ধোঁয়া ছাড়ে - আজ তার খালি মুখ । 
সময় বয়ে যায় - সাথে যা কিছুই যায় , তার কোনটাই ফেরেনা । যেমন আর ফিরবে না গতকাল বিকালের প্যাঁচা দা ।
চায়ের দোকানের মালিক শিবুদার মুখে একরাশ বিরক্তি । তার মুখের ভাষা খাতাকলমে খারাপ না হলেও শুনতে অনেকেরই ভালো লাগেনা- কারন মুখের উপর সহজ কথা খুব সহজ ভাবে বলে দেন । 
"নেপাল তোর " - শিবুদা কিছু বলতে শুরূ  করার আগেই নেপাল তাকে থামিয়ে দেয় । " নাহ আজ আর ডিম না হয় নাই খেলাম  " । 
আমি প্রথম থেকেই আজ চুপ করে এক কোনায় বসে আছি ।  চোখের সামনে  গতকালের এমন সময়ের ছবি ভাসছে । শিবুদা  আমার কাছে জানতে চাইলো , "কিরে , তোদের চা কয় কাপ ? " 
থাক , শিবুদা আজ চা লাগবে না " । 
নিমেষে শিবুদা কেমন যেন ভয়ংকর হয়ে উঠলো । 
" তোদের মতো  হাড় হারামির দল বাপের জন্মে দেখিনি " ।  আমার মাথা গরম হয়ে যায় । 
"মুখ সামলে  কথা বলো শিবুদা " । 
কেন ? মুখ সামলানোর কি আছে রে ? হারামিগুলো কালকেও প্রায় দুশ টাকার বিল করেছিস - আর আজ এখানে এসে নাটক করছিস ? বউনি না করে বেঞ্চি জুড়ে বসে বসে তামাশা চলছে ? 
আমি এবার চিৎকার করে উঠি - ভুলে যেওনা কালও এখানে এমন সময়ে প্যাঁচা দা ছিলো । 
ছিলো তো ছিলো - 
আমি অবাক হয়ে যাই - এই কি শিবুদা ?  এতো কঠোর মানুষ ? 
শিবুদা দাঁত মেলিয়ে দিয়ে বলে , " প্যাঁচা তো আর মরে স্বর্গে যায়নি -গেছে কোলকাতায় দুদিনের জন্য নিজের কাজে - আর যাওয়ার আগে তো প্রতিবারের  মতো বলেই গেছে , গাধাগুলো যে যা খায়, যেন ওর নামে বিল করে রাখি " । 
আমি অবাক হয়ে ভাবি এই বিল করার কথাটা বলতে শিবুদা তুমি এতোটা সময় নিলে ?
" শিবুদা , তুমি এতোটা কঠোর ? "
    
  S.V.O


























Post a Comment

0 Comments