PEN- PROLAY.
INK- ANANYA.
S.V.O
আমরা মানুষ সকলেই - তবে ধরনে ভিন্ন, কেউ সাধারন , কেউ অসাধারন আর কেউ বা অতি সাধারনের দলে । সাধারনত সাধারনেরা অসাধারন সব কথা বলে আর অসাধারনেরা খুব সাধারন বিষয়ে মাথা গলিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা রীতি নীতিকে পুরো বেমক্কা লাশকাটা ঘরে চালান করে দেয় ।
আমরা অতি সাধারন , তাই বুঝতে পারিনা আমাদের পাতিপুর গ্রামের প্যাঁচা দা কোন দলে - সাধারন নাকি অসাধারন ? ওনাকে নিয়ে আজ বিকালের চায়ের দোকানে বসে হয়তো আজ এভাবে ভাবতে হতোনা , যদি না উনি গতকাল রাতেও রোজকারের মতো আমাদের সাথে এখানে সময় না কাটাতেন ।
আমরা জানি প্যাঁচা দা এক জীবন্ত বটগাছ। প্রাণবন্ত , কিন্তু অবিচল । ভোরের আলোর সাথে পাখির দল উরে চলে যায় , রেখে যায় বাসা আর ডিম - সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসলে সারা গায়ে অবসন্নতা মেখে বাসায় ফিরে আসে - বটগাছ পাখিদের কাছে কিছুই জানতে চায়না ।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু আর তর্কে বহুদুর । বটের গায়ে কেউ এসে সিঁদুর মাখিয়ে মঙ্গল কামনা করে , আবার কেউ চায়ের দোকান বানিয়ে ভিতরে গাঁজা বিক্রী করে , কেউ নিজের দরকারে ডাল কেটে নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয় । বটগাছ চুপ করে থাকে । এ জগতে তার কাজ দেওয়া , নেওয়া নয় ।
প্যাঁচা দাও সেই বটগাছটির মতো- বৌদির সায় ছিলো তার এই জীবন যাত্রায় । সংসারে এসেও তাই আর বাকী দশজঅনের মতো তাদের আর সংসার করা হয়নি।
অন্যের মেয়ের বিয়ে , গ্রামের নাটক , গ্রামের স্কুল - এই সব নিয়েই দিব্বি কাটিয়ে দিলো ।
গতকাল রাতেও হাসি মাখা মুখ করেই গেলেন - আজ কোথায় সে হাসি আর কোথাও সে মুখ ? একদিকে আমরা আর অন্যদিকে প্যাঁচা দা । মাঝখানে সময় । এখন হাজার চাইলেও প্যাঁচাদা কে দেখার পথ নেই ।
জীবন আসলে বেঁচে থাকার জন্য । বাঁচতে গেলে পরিবর্তনকে মানতে হয় ।
আজ এখন এই সন্ধ্যায় মনে হলো আমরা সেই সব সাধারন মানুষের দলে , যারা সবকিছু নীরবে মেনে নেয় - কিন্তু অনেক কিন্তুর মাঝে আটকে থাকে ।
সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে মানেই - চা , বিড়ি , সিগারেট , ডিম ভাজা - যে যার মতো খেতে থাকো - বিল দেবেন প্যাঁচাদা ।
গতকাল এরকম সময়ে দুই তিন বার চা হয়ে গেছিলো। নেপাল ডিম ভালবাসে । কাল সাতখানা খেয়েছিলো। আজ চা আছে , আমরা আছি , নেপাল আছে , ডিম আছে - শুধু নেই খাবার ইচ্ছা আর নেই প্যাঁচা দা । সামনে পড়ে আছে সময় ।
সকলের ভিতরে নেপাল খুব ভেঙ্গে পরেছে । মাঝে মাঝেই মোবাইল বের করে প্যাঁচাদা র ছবি দেখছে । আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম , " ভাই রাখ এসব - এখন কি করা যায় তাই ভাব " ।
আমাদের নিমাই বাড়ীতে বিড়ি সিগারেট কিছুই খায়না । অথচ প্রতিদিন এখানে বান্ডিল ধরে বিড়ি টেনে স্টিম ইঞ্জিনের মতো ধোঁয়া ছাড়ে - আজ তার খালি মুখ ।
সময় বয়ে যায় - সাথে যা কিছুই যায় , তার কোনটাই ফেরেনা । যেমন আর ফিরবে না গতকাল বিকালের প্যাঁচা দা ।
চায়ের দোকানের মালিক শিবুদার মুখে একরাশ বিরক্তি । তার মুখের ভাষা খাতাকলমে খারাপ না হলেও শুনতে অনেকেরই ভালো লাগেনা- কারন মুখের উপর সহজ কথা খুব সহজ ভাবে বলে দেন ।
"নেপাল তোর " - শিবুদা কিছু বলতে শুরূ করার আগেই নেপাল তাকে থামিয়ে দেয় । " নাহ আজ আর ডিম না হয় নাই খেলাম " ।
আমি প্রথম থেকেই আজ চুপ করে এক কোনায় বসে আছি । চোখের সামনে গতকালের এমন সময়ের ছবি ভাসছে । শিবুদা আমার কাছে জানতে চাইলো , "কিরে , তোদের চা কয় কাপ ? "
থাক , শিবুদা আজ চা লাগবে না " ।
নিমেষে শিবুদা কেমন যেন ভয়ংকর হয়ে উঠলো ।
" তোদের মতো হাড় হারামির দল বাপের জন্মে দেখিনি " । আমার মাথা গরম হয়ে যায় ।
"মুখ সামলে কথা বলো শিবুদা " ।
কেন ? মুখ সামলানোর কি আছে রে ? হারামিগুলো কালকেও প্রায় দুশ টাকার বিল করেছিস - আর আজ এখানে এসে নাটক করছিস ? বউনি না করে বেঞ্চি জুড়ে বসে বসে তামাশা চলছে ?
আমি এবার চিৎকার করে উঠি - ভুলে যেওনা কালও এখানে এমন সময়ে প্যাঁচা দা ছিলো ।
ছিলো তো ছিলো -
আমি অবাক হয়ে যাই - এই কি শিবুদা ? এতো কঠোর মানুষ ?
শিবুদা দাঁত মেলিয়ে দিয়ে বলে , " প্যাঁচা তো আর মরে স্বর্গে যায়নি -গেছে কোলকাতায় দুদিনের জন্য নিজের কাজে - আর যাওয়ার আগে তো প্রতিবারের মতো বলেই গেছে , গাধাগুলো যে যা খায়, যেন ওর নামে বিল করে রাখি " ।
আমি অবাক হয়ে ভাবি এই বিল করার কথাটা বলতে শিবুদা তুমি এতোটা সময় নিলে ?
" শিবুদা , তুমি এতোটা কঠোর ? "
S.V.O
0 Comments